জিদান গেইম প্ল্যান এন্ড এক্সিকিউশান (শেষ পর্ব)

জিদান গেইম প্ল্যান এন্ড এক্সিকিউশান (শেষ পর্ব)

2018, May 23    

আগের দুই পর্বে আমরা জেনেছি জিদানের ফুটবল দর্শন আর ট্যাকটিক্যাল ভার্সেটিলিটি নিয়ে। কিন্তু ম্যাচ জিততে লাগে আরো একটা জিনিস সেইটা হল প্রপার গেইম প্ল্যান।

যারা রিয়ালের ম্যাচ ফলো করেন নিয়মিত তারা খেয়াল করলে দেখবেন জিদানের সাথে কিছুক্ষণ পর পর আরেক টাকলা মাথা এসে একটু পর পর কথা বলে যায়। আমি ভেবেছিলাম এইটা হয়ত কোচিং এর স্টাফ হয়ত হবে। কিন্তু না অনুসন্ধান করতে গিয়ে বের হয়ে আসল কেচো খুড়তে সাপ।

সাম্রাজ্য প্রতিষ্টা করবেন আর এর জন্য আপনার চাই একজন পরামর্শক যে আপনাকে গাইড করবে। আপনার বিপদে আপদের পাশে থাকবে। সব থেকে বড় কথা আপনার ডান হাত। আর জিদানের সে মাস্টার স্পাই হল ডেভিড বেট্টোনি। এই পর্বের লেখা মূলত এই স্পাই কে নিয়ে।

বেট্টোনির সাথে জিদানের পরিচয় শৈশব থেকে। তারা তখন ফ্রান্সে ক্যানেসে একসাথে খেলত। বেট্টোনি এর পর ইটালীয়ান লীগে সেকেন্ড ডিভিশনে খেলত। আর জিদান খেলত জুভেতে। তার ক্যারিয়ারটা খুব বড় না হলেও ট্যাকনিক্যাল দক্ষতা নিয়ে কারো খুব একটা প্রশ্ন ছিল না। ’১৩ তে মাদ্রিদ বেট্টোনি কে হায়ার করে মাদ্রিদের ইউথ টিমের স্কাউটিং এর জন্য। ’১৪ তে যখন জিদান ক্যাসিলাতে কোচ হয়ে আসে তখন জিদান বেট্টোনিকে তার পার্টনার হিসেবে চাই। ছোটবেলার বন্ধুকে না বলার কোন কারণ ছিল না বেট্টোনির। এর পর শুরু হয় দুইজনের কিলিং প্ল্যান। ক্যাসিলাতে যখন জিদানের মটিভেশন ট্যাকটিক্যাল কাজে আসছিল না। বেট্টোনী তখন জিদানকে বলে, I think we have to think differently. এই বেট্টোনীর পরামর্শে জিদান ম্যান ইউ থেকে রাইট ব্যাক ভায়েলাকে লোনে আনা। তার স্কাউটিং দক্ষতা নিয়ে মাদ্রিদে কোন কালে সন্দেহ ছিল না। আর ফ্রেঞ্চ হবার কারনে এরা স্কাউটিং এ অনেক ভাল হয়।

জিদান এরপর মাদ্রিদ কোচ হল। পেরেজ চাইল সে একজন প্রমিনেটকে এসিট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে নিক। কিন্ত না, জিদান জানত সাম্রাজ্য গড়তে লাগে বিশ্বাস আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সে সরাসরি পেরেজকে “না” বলে দিয়ে বেট্টোনীকে তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিল। কিন্তু বাধ সাধল আবার উয়েফা। যেহেতু বেট্টোনীরও কোন কোচিং লাইসেন্স নেই তারা অস্বীকৃত জানাল। মাদ্রিদ তখন স্টেটমেন্ট চেঞ্জ করে বেট্টোনীকে ট্যাকনিক্যাল টিমের হেড করল যাদের মূল কাজ হচ্ছে জিদানকে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে অবগত করা। আর মূল দলের সব প্লেয়ারদের খোজ খবর রাখা। আমাদের এটাকিং কেমন হবে ডিফেন্স কেমন হবে মন্ত্রী সেনা সবাই প্রস্তুত। কিন্তু যুদ্ধ করব যার সাথে তার সম্পর্কে ও তো জানা লাগবে। জিদান ট্যাকনিক্যাল টিম এই তথ্য গুলোই জিদানকে দিতে শুরু করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তারা প্রতিটা তথ্য নিখুত ভাবে দিতে সক্ষম। They invest more money on technical team rather than players. কখন কাকে সাব করানো হবে, কোচের দর্শন কেমন, কোচের অতীত ইতিহাস,ফর্মেশন , রেকর্ড, গ্রো আপ সব। এর পর জিদান আর বেট্টোনী প্রতিপক্ষের ২৩ জন প্লেয়ারকে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা নীরাক্ষা করতে থাকে।তারা জানে কোচ কত মিনিট পর সাব করাতে পারে। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা পিসির সামনে বসে গ্রাফ এনালাইজ করতে থাকে। এন্ড ফিট করতে থাকে সিস্টেম। যে কাজটা ওই সময় লিপ্পি করত প্লেয়ারদের সাথে বসে একসাথে তা এখন জিদান করে আধুনিক উপায়ে সায়েন্সের হাত ধরে। আর এই গ্রাফ গুলো দেখে তারা ডিসাইড করে কখন কে কাকে মার্ক করবে। জোনাল হবে নাকি ম্যান মার্কিং হবে। আর এই ট্যাকনিক্যাল টিমের সব থেকে সেরা একটি সিদ্ধান্ত আমার কাছে মনে হয়, ’১৬ এর ফাইনাল। তার টেকনিক্যাল টিম তাকে বলেছিল, অবালক রাইট সাইডে বেশি লাফ দে পেনাল্টিতে। তাই জিদান ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে সবাইকে লেফট সাইটে শট প্র্যাকটিস করায়। ইউটিউবে গেলে দেখা যাবে অবালক পুরো শুট আউটে শুধু দাঁড়িয়ে ছিল একবারও নড়া লাগেনি তার এন্ড রিয়াল সব শটই লেফটে নিয়েছিল। সেইম ইন্সট্রাকশন ছিল নাভাসের বেলায়ও। একটা বাদে সম্ভবত বাকীগুলোতে সে পারফেক্টলি ডিরেকশন রাখতে সক্ষম হএয়ছিল। প্ল্যানিং করা শেষ। এইবার সেইটার জন্য তো প্রস্তুত করা লাগবে দলকে। নাও ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে ২৩ জনের পুরো স্কোয়াডকে ভাগ করা হয় ৫ জন ৫ জন করে। এইটাও লিপ্পি স্টাইল। প্ল্যানিং অনুযায়ী ৫টা গ্রুপকে ট্রেইন আপ করানো হয়। একদল হাই প্রেস প্র্যাকটিস করতে থাকে তো অন্য দল পোজেশনাল ফুটবল। সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার গেইম প্ল্যানটা কি। পুরো ২৩ জনকে তখন উপস্থিত থাকা লাগে। প্রতিপক্ষের কোন জায়গায় কখন কত মিনিটে আঘাত করা হবে। কখন কাকে সাবস্টিউট করা হতে পারে সম্ভাব্য সব কিছু। এর পরেই জিদান আর তার ট্যাকনিক্যাল টিম সব প্ল্যানিং এর কাগজ ছিড়ে ফেলে। (ফুললি কিলার ইনসিটক্ট। তাকে দেখতে শুধু শুধু গডফাদার লাগে না। তার কাজ চিন্তাধারাই এমন যেইতা ফেসে ফুটে উঠে।) এখনো দলের কেউ জানে না কালকে কে খেলবে নাকি না। দে আর ফর্স টু ডু দেয়ার অন ওয়ার্ক।

গেইম ডেঃ

এখন চলবে বেসিক ট্রেইনিং। প্রথম ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ। ২ মিনিট ফ্রী লাইন, ৩ মিনিট সারিতে, ২ মিনিট মবিলিটি, আর বাকী ৩ মিনিট মোর ইনটেনস্টিটি ইন রান আপ।

পোজেশন ফুটবল ৫ মিনিট। ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড প্লে দ্যান ৩০ সেকেন্ড রেস্ট এর পর আবার ১ মিনিট প্লে ৩০ সেকেন্ড রেস্ট। নাও ৪৫ সেকেন্ড কুইক প্লে। ১ মিনিট দেওয়া হয় হাইড্রেশনের জন্য।

এইবার তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।একভাগ হল ডিফেন্স+ মিড অন্য ভাগে থাকে মিড+ ফরওয়ার্ড। সম্পুর্ণ আলাদা ট্রেইনিং হয় দুইটা গ্রুপের ৫মিনিট ধরে। ফরওয়ার্ডরা শুটিং, বিল্ড আপ এই সব প্র্যাকটিস করে ডিফেন্ডাররা ট্যাকল, বিল্ড ফ্রম ব্যাক এইগুলো। প্র্যাকটিস শেষ।

জিদান এর পর টিম সিলেকশন করে। এত লেইট সিলেকশন করার কারণ হল, কিছুদিন আগে খেলার ৬ ঘন্টার পুর্বে সিলেকশন ফাস হয়ে গিয়েছিল তাও আবার বড় দুইটা ম্যাচে। বার্সার সাথে ভালভার্দে আগে থেকে জানত ইস্কো খেলবে না কোভাচিচ খেলবে এন্ড এইটা জেনেই সে কোভাচিচকে ইউস করেছিল। জিদান মারা খেয়ে গিয়েছিল। তারপর পিএসজির সাথে হোম ম্যাচেও সেইম। আর মাদ্রিদ ড্রেসিংরুমে এই ঘটনা নতুন নয়। মরিনহোর সাথে ক্যাসিয়াসের ঝামেলা শুরু হয় মূলত এই রকম একটা ঘটনা থেকেই। মরিনহো ক্যাসিয়াসকে সন্দেহ করে ফাঁস করার জন্য। আর ড্রেসিংরুমে সবার সামনে তাকেই দোষ দে। জিদান এমন কিছু করেনি। জিদান উলটো পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। যেহেতু ফাঁস হয়েছে তারমানে প্লেয়ারদের আর জানার দরকার নেই কে খেলবে নাকি খেলবে না। ম্যাচের সময় নিজেই দেখতে পারবে। আর এতে সুবিধে হল দুইটা। ১। যেহেতু সিনিয়র কোন প্লেয়ার জানে না সে আদৌ খেলতে পারবে কিনা তারা দলে থাকার জন্য বেস্ট আউটপুট দিতে শুরু করল। ২। জুনিয়র দল যখন দেখল জিদান মেরিট বেসড টিম সিলেকশন করে তারাও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য উঠে পরে লাগল।

নাও ম্যাচের ঘন্টাখানেক আগে টিম সিলেকশন হল কাজ বুঝিয়ে দেয়া হল। মাঠে এক্সিকিউশনের পালা। জিদান সধারণত প্রতিপক্ষের খেলা বুঝার চেষ্টা করে প্রথম হাফে। যদি দেখে তাদের গোল দরকার তাহলে হাই প্রেস করে। আর তা না হলে প্রথম ১৫-২০ মিনিট প্রেশার এবজর্ভ করতে থাকে। আর এইজন্য এই সময় সে পোজেশনাল ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। এইদিকে জিদানের ট্যাকনেক্যাল টিম নোট ডাউন করা শুরু করে দে। যদি প্ল্যান এ কাজ করে তো ভাল। তা না হলে সেকেন্ড হাফে শুরু হয় তার আসল ট্রাম্প কার্ড। গেইম রিডিং এবিলিটি। জিদানের সব থেকে স্পেশাল দিক। মাঠে যখন প্লেয়াররা কোন স্পেস খুঁজে পাই না। ডাগআউটে বসেও সে তখন স্পেস খুঁজে পাই। জিদান তার সময়ের সেরা বেস্ট মিডফিল্ডার ছিল শুধুমাত্র তার ফার্স্ট টাচ আর ফেন্সি ড্রিবলিং এর জন্য না। সে তার সময়ের সেরা মিড ছিল তার এই ঐশ্বরিক গেইম রিডিং ক্ষমতার জন্য। ফেনোমেননের একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম, সেখানে জিদানের বেস্ট ফিচার বলতে সে বলেছিল, জিদান বল রিসিভ করার পর আমি চিনতে করছিলাম আমি কি সামনে স্পেসে দৌড় দিব কিনা কিন্তু জিদান যেহেতু তার সাথে কোন আই কন্টাক্ট করছিল না এন্ড বল রিসিভ করেছিল পিছন থেকে তাই সে মোটামুটি শিউর ছিল জিদান ব্যাক পাসই খেলবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে জিদান সে স্পেসেই বলটা ফেলল যেইখানে সে বলটা চাচ্ছিল।

you don’t look but you see everything. Those two things most impressed me a lot. Only few players I know have the same technique and vision.

আর তার এই গেইম রিডিং এবিলিটির উপর এখন মাদ্রিদের প্লেয়াররাও ভরসা রাখে। তারা জানে, তাদের দলে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে জিদান খেলছে। তারা স্পেস খুজে না পেলেও ঠিকই জিদান খুজে বের করবে। আর এইকারনেই প্রতি মায়চেই জিদান গোল করার উপায় বের করে।

জুভের সাথে শেষ ম্যাচে এলেগ্রেনি জিদানের ট্যাকটিস দিয়ে জিদানকে বধ করার পরিকল্পনাই নামে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় এলেগ্রই ভাল কোচ কিন্তু কখনো জিদান লেভেলের প্লেয়ার ছিল না। জিদান বুঝতে পারছিল, জুভে মরিয়া এটাক করছে। তার মানে হল তারা বিভিন্ন জায়গায় স্পেস ফেলে আসতেছে কিন্তু তাদের ইনটেইনস ফুটবলের কারণে আমরা গোল দিতে পারছি না। জিদান স্পেস গুলো খুজে নিল। আর ডিসাইড করল এটাকের জবাব এটাক দিয়েই দিতে হবে। খুলিত বলেছিল,

zidane made the right choice and have no fear about losing. This is how champions’ mentality grows up. You always have to be very positive in the game and zidane has this attitude.

এতটুকু পড়ে আমরা এইটা বুঝতে পারলাম মাদ্রিদের প্লেয়াররা তাকে বেস্ট কোচ বানায়নি আবার জিদানও তাদের বেস্ট প্লেয়ার বানায়নি। এইখানে সম্পর্কটা হল ভিন্ন। কোচ কোচের কাজ করেছে, প্লেয়াররা তাদের কাজ করেছে। এন্ড কম্বিনেশন অফ বথ দে মেইড ইচ আদার গুড। আর এইটা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে ক্যানেবারো উক্তিটি বলেছিলাম।

Even in you bad time, you always knew there’s someone for you to support and courage.

খেলা শেষ। সংবাদ সম্মেলনে যখন জিজ্ঞাস করা হবে, আপনার ট্যাকটিস কি অথবা কি মনে করে সাবস্টিউট করলেন। জিদানের মুখস্ত উত্তর, আমি কিছু করিনি। প্লেয়াররা সবকিছু করেছে। মিডিয়া তখন বলে উঠে, জিদান কোন কোচ না। সব তার খেলোয়াড়ের জন্য হয়। কিন্তু গভীরভাবে চিনতে করলে বুঝা যায়, সে তার ইন্টেনশন কারো কাছে ফাঁস করতে চাই না। উলটো সাংবাদিকদের সাথে সাফাই গাই, হ্যা হ্যা প্লেয়াররাই ম্যাচ জিতিয়েছে। রন অনেক ভাল খেলেছে। আর মিডিয়া ও হ্যাপি প্লেয়ারও হ্যাপি। সবাই খুশি জিদান কে ম্যান ম্যানেজমেন্ট কোচ বানিয়ে।

এইবার একটু চোখ বুলিয়ে নি, একটা দল কিভাবে গড়ে উঠে। দল বলতে আমরা বুঝি একটা গোত্র বা সমষ্টি যারা সেইম প্রিন্সিপাল মানে এবং লক্ষ্য থাকে এক। চিনতে করুন পাড়াতে যখন কোন ফুটবল ম্যাচ হয়, তখন আপনি কি অন্য পাড়ার বেস্ট ফুটবলারকে ডাক দেন নাকি আপনার বন্ধু যার সাথে বোঝাপরা ভাল তাকে আগে দলে নেন? প্রতিপক্ষ যতই ভয়ংকর হোক না কেন, আপনি তাকেই দলে নেন, যার সাথে আপনার বোঝাপরা ভাল যাকে আপনি বিশ্বাস করেন। আপনি বিশ্বাস করেন আপনার ১১ জন মিলে কোন না কোন ভাবে তাদেরকে রুখে দিতে পারবেন। যখন মনে হয় পারবেন না তখন বাকী সবার মতামতের ভিত্তিতে অন্য পাড়ার প্লেয়ার হায়ার করা হয় যদিও এইটা খুবই কম। এন্ড সেইম প্রিন্সিপাল ফলো করে জিদান। টিমে গড়ে উঠে বোঝাপড়া আর বিশ্বাস থেকে। বেস্ট প্লেয়ার দিয়ে না। বার্সার মেসি, জাভি ইনিয়েস্তা একদিনে আসেনি একাডেমী থেকে তারা খেলে আসছিল একসাথে। বছরের পর বছর একসাথে খেলার জন্য মেসি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে জর্দি কোথায় দৌড়াবে। আর এইজন্য আমরা বলতে আপ্রি না জাভি ইনিয়েস্তা মেসিকে বেস্ট বানিয়েছে কিংবা মেসি তাদের। ইটস অল এবাউট টিম গেইম। একজনের জন্য আরেকজনকে দরকার। কেউ কাউকে বেস্ট বানায় না। বেস্ট বানায় মিডিয়া, মানুষ।

জিদান কোচ হয়েছে দুই সিজন হল। সাম্রাজ্য গড়তে হলে আপনার স্কোয়াড থাকতে হবে ফিক্স আর প্লেয়ারদের টেনশন করা লাগবে না নতুন কেউ এসে তার জায়গা নিবে তখনি আপনি বেস্ট আউটপুট পাবেন। ফিক্স টিমের সুবিধা হল সবাই একজন আরেকজনের খেলা বুঝবে শুধুমাত্র বল রিসিভ বডি মুভমেন্ট দেখে। যেইটা নতুন প্লেয়ার এসে মানিয়ে নিতে অনেক সময় নিবে। কিন্তু অফ ফর্মের প্লেয়াররাও প্র্যাকটিস করলে একই টিমের সাথে সে বেস্ট আউটপুট দিবে। এইখানে পরিশ্রমটাই মুখ্য।

ধরুন আপনাকে বলা হল, পড়াশুনায় ভাল করার জন্য আপনাকে ৮ ঘন্টা দৈনিক স্টাডি করতে হবে। এই প্রিন্সিপাল আপনি জানেন। এবং আপনি প্রতিদিন সেইটা করে যাচ্ছেন তারমানে আপনি রেডি। আপনাকে কখনো টিম থেকে বাদ দেওয়া হবে না। আপনি হচ্ছেন এখন এভারেজ প্লেয়ার। কিন্তু আপনার দলের অন্য কেউ অতিরিক্ত ১ ঘন্টা বেশি সময় দিচ্ছে যেইটা রন করে। এর মানে হল সে টিমে থাকা আপনার থেকেও বেশি ডিজার্ভ করে। কারণ সে আপনার থেকে ১ ঘন্টা বেশি প্র্যাকটিস করেছে। কিন্তু ধরুণ ৮ ঘন্টা পরাশুনা করেও আমার পড়ালেখার কোন উন্নতি হচ্ছে না। যেহেতু এইটা সায়েন্টিফিক্যালি প্রুভেন ৮ ঘন্টা স্টাডি করলে সব শেষ হয়, তারমানে আপনার কোথাও না কোথাও সমস্যা হচ্ছে। এইটা সাইকোলজিক্যাল কিংবা অন্য কোন পারসোনাল ইস্যু। এই সময় যদি দেখেন আপনাকে নিয়ে কথা হচ্ছে ছেড়ে যাচ্ছে, আপনি আরো নার্ভাস হয়ে যাবেন। যেইতা এখন নাভাসের হচ্ছে। আর এই সময় প্লেয়ারদের দরকার পরে টিমমেইটদের সাহায্য আর কোচের ভালবাসা। জিদান সেই কাজটাই করে। সে তার প্লেয়ারদের অলওয়েজ ব্যাক আপ দে। আর আপনি যখন অফফর্মের কারনে মেইন টিম থেকে বাদ পড়েন আপনি বুঝতে পারেন আপনি এখনো জিদানের প্ল্যানে আছে কিন্তু হয়ত অন্যরা আপনারা থেকেও বেশি পরিশ্রম করছে। তখন সে আরো পরিশ্রম করতে শুরু করে। জিদানের অধীনে ডেভেলাপ হওয়া প্লেয়ারগুলোকে দেখলে বুঝা যায় , নাচো, ক্যাসে, এসেন্সিও, ইস্কো, ভাস্কেস। ক্যাসে প্রতি ম্যাচে দুই উইং ২৫ মিটার করে কভার দে যেইতা অবিশ্বাস্য। ভাস্কেসের ওয়ার্করেইট নিয়ে কোন প্রশ্নই করা যাবে না। এই প্লেয়ারগুলোকে আগে কোন মাদ্রিদ কোচই প্রপারলি ব্যবহার করতে পারেনি। সিজনের শুরুতে তো অনেকে ভাস্কেসকেই বেচে দিতে চেয়েছিল কিন্তু এই ভাস্কেসই এখন জিদানের ৪-৪-২ ফ্ল্যাটের কী প্লেয়ার। এই হল জিদানের সাম্রাজ্যের বর্তমান অবস্থা। কিন্তু জিদানের সাম্রাজ্যের কী প্লেয়ার হল রন, রামোস। মজার ব্যাপার হল, দুই জনের বয়স এখন পড়তি। দেখার বিষয় হল, এজিং রন আর রামোসের সমস্যা সে কিভাবে সলিউশন দে। এইটাই হবে কোচিং ক্যারিয়ারে তার সব থেকে বড় পরীক্ষা। ট্যাকটেক্যালি সে অলরেডি উইন আমার মতে। ফার্গুসান এজিং ইস্যু গুলো খুব সুন্দর করে ইয়ং প্লেয়ার কিনে পূরণ করত। আর এইখানে হয়ত আবার দৃশ্যপটে আসবে জিদানের বন্ধু বেট্টোনী আর তার ট্যাকনিক্যাল টিম।

জিদানের ট্যাকটিক্যাল ৫টা উইনঃ

১। কোপা দেল রে। সেভিয়া বনাম রিয়াল(৩-০)ঃ সাম্পোলির অধীনে তখন অসাধারণ ফুটবল খেলছিল সেভিয়া। তারা প্রচুর হাই প্রেসে খেলত। জিদান ঠিক করল, তাদের কাউন্টার প্রেস করবে। এটাকিং ফুটবলের জবাব এটাকিং দিয়ে হবে। প্রথম গোলটা ও এসেছিল ক্যাসের হাই প্রেসে হামেস থেকে।

২। লীগ ম্যাচ। বার্সা বনাম রিয়াল (১-২)ঃ বার্সার বিল্ড আপে রিয়াল কোন প্রেস করতে চাইল না। দে সীট ডিপ। ৪-৩-৩ এর বিপরীতে জিদান ৪-৫-১ দাঁড় করাল। যেখানে রন বেল দুইজনকেই ট্র্যাক বেক করতে হত(বর্তমানে রনকে এই কাজ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।) ৩৪% বল পজিশন+ ১০ জন ম্যান নিয়েও জিতে আসল রিয়াল।

৩। লীগ ম্যাচ। এটল্যাটিকো বনাম রিয়াল (৩-০)ঃ এর আগে মাদ্রিদ ৩ বারের দেখায় হারাতে পারেনি। ম্যাচের আগে অনেক কী প্লেয়ার মিস। ভারান,নাচো, কোভাচিচ, ইস্কো কে দিয়ে ৪-৩-৩ থেকে নিউ ফরমেশন ৪-১-৪-১। পুরো ম্যাচে এক বারের জন্য মনে হয়নি রিয়াল হারতে পারে। সিমিওনে ওয়াজ ক্লুলেস ।

৪। লীগ ম্যাচ। ভিলারিয়াল বনাম রিয়াল(২-৩)ঃ সেকেন্ড হাফে ২-০ গোলে পিছনে। ভিলারিয়াল পোজেশন ডমিনেট করছিল। জিদান ডাসেন্ত লাইক ইট। হি মেইড এ চেঞ্জ ক্যাসের জায়গায় এটাকিং মিড ইস্কো। এন্ড আফটার ৩০ মিনিট ৩-২।

৫। ফাইনাল। জুভে বনাম রিয়াল(১-৪)ঃ প্রথম অর্ধে ১-১। খেলা ব্যালান্সড। জুভে বেটার তাও। জিদান ড্রেসিংরুমে বলল, আমরা ভাল খেলছি। আমাদের যা করা লাগবে আরেকটু প্রেস। জিদান রনকে বলল, স্টে ডিপ এর ফলে যেইটা হল জুভের ডিফেন্সের সাথে মিডের গ্যাপ বড় হতে লাগল। এন্ড বিটুইন দা লাইনের বেস্ট প্লেয়ার ইস্কো তখন কন্ট্রোল নেওয়া শুরু করল। এর ফলে, জুভেকে স্পেস কমানোর জন্য মিড লাইন পিছনে যেতে থাকল।আর এইটা এনাফ স্পেস দিল ক্রুস মদ্রিচকে এক্সপোলয়েট করার জন্য। এর পর ছিল লো ক্রস ট্যাকটিস। যেহেতু জুভের প্লেয়ারদের হাইট বেশি। হাই ক্রস ইফিসিয়েন্ট না । আগের দিনেই জিদানের ট্যাকনিক্যাল টিম তাকে জানিয়ে দিয়েছিল জুভে লো ক্রসে দূর্বল। মাদ্রিদ ওইটা প্র্যাকটিস করে যেইটা পরবর্তীতে মার্সেলো স্বীকার করে।

জিদানের খেলানর ধরণ দেখলে আমরা যেইটা বুঝতে পারি সে প্রথম হাফে প্ল্যান এ নিয়ে খেলে তার প্রতিপক্ষ অনুসারে। আর সেকেন্ড হাফে আমরা দেখি খেলোয়াড় জিদানকে। আর এইটার উপর ভিত্তি করে সে তার প্ল্যান বি সি সাজায়। সবার শেষে দুইটা কথা বলে এই লেখা শেষ করতে চায়। এক হল আমাদের দলের ক্রুসের,

Zidane is the best footballer in the football history. He talks less. But when he talks, you have to listen.

পিউর ম্যানমেনেজম্যান্ট+লিডারশিপ ক্যারেক্টার।

অন্যটা এক জার্নালিস্টের

Even God Has No Idea What Zinedine Zidane Is About To Do Next

পিউর ট্যাকটিক্যাল সেন্স।

WE FANS JUST NEED TO GIVE HIM TIME AND COURAGE AND HAVE TO TRUST HIS WORKS. HE DESERVES IT AFTER DOING SO MANY GOOD THINGS FOR MADRID.