জিদান ট্যাকটিক্যাল এনালাইসিস (পর্ব ১)
জিদানের বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ আর কিছু মাদ্রিদস্তাদের কমন অভিযোগ আছে। অভিযোগগুলো হলঃ
১। জিদান শুধুই ম্যান ম্যানেজমেন্ট এই ভাল। তার কোন ট্যাকটিক্যাল ক্ষমতা নেই।
২। জিদান আশে পাশে ভাল প্লেয়াররাই তাকে ভাল কোচ বানিয়েছে।
৩। জিদান বেঞ্জুকে খেলায় তার দেশপ্রেম বেশি।
৪। জিদান হামেস, মোরাটাকে বেচে দিছে।
৫। জিদানের খেলা শুধু ক্রস আর ক্রস।
৬। জিদান লাকি। বারবার লাকের জন্য বেচে যাই।
৭। জিদান অন্য কোন ছোট ক্লাবে গেলে আর সাফল্য পাবে না।
৮। জিদান শুধু ডাগ আউটে বসে খালি হাততালি দে।
মোটামুটি এইগুলাই হল জিদানের বিরুদ্ধে তার কট্টরপন্থীদের অবস্থান। নাও আমরা চেষ্টা করি এই অভিযোগগুলো আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত।
বর্তমান কালে সেরা কোচ বলতে আমরা সচরাসচর টেনে আনি গার্দিওলা, মরিনহো, ক্লপদের। যাদের পুরোপুরি একটা নিজস্ব ফিলোসফি আছে। এই দর্শনের বাইরে তারা কিছু করে না। যেমন গার্দিওলা, ক্লপের এটাকিং ভার্সনের এন্টি ভার্সন হল মরিনহো, সিমিওনে। মডার্ণ ফুটবলের ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে এই ক্লপ সিমিওনের দর্শন।
কিন্তু যারা একটু ওল্ড ধাচ ফুটবল পছন্দ করে। তারা একটু মনে করলে খুজে পাবে, এই দুই টাইপের কোচের বাইরেও আরো একপ্রকার কোচ আছে, যারা এখন দূর্লভ। এরা হল ইটালীর ওল্ড স্কুলের ট্যাকটেশিয়ান। যারা জানে, DARK ART OF GAME MANAGEMENT & DEFENSIVE ORGANISATION. এই ক্যাটাগরির কোচরা হলেন হিটজফিল্ড, দেল বক্স, লিপ্পি, আনচলত্তি, হেইঙ্কেনস, ফার্গুসান, ক্যাপেলো, মানচিনি এরা। সত্য কথা বলতে, ফার্গুসানের পর আর কোন নতুন কোচ এই ধারার কোন প্রতিনিধিই ছিল না। হালের কন্তে, জিদানরা এই ধারার মডার্ণ ভার্সন। কন্তে নিজের কোন টিম এখনো ডেভেলাপ করতে পারেনি। তাই তার থেকে বেস্ট আউটপুটটা আমরা পাচ্ছি না। সেদিকে জিদান অলরেডি তার যা রিসোর্স দরকার সব জোগাড় করে ফেলেছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে বর্তমানকালের কোদচের মধ্যে একমাত্র জিদানই বলেছে,”It’s my team.” এবং আমরা এখন তার ফলাফল দেখতে পারছি। খুব সম্ভবত যখন মাদ্রিদে সে ক্যারিয়ার শেষ করবে তখন তাকে সর্বকালের সেরা মাদ্রিদ ম্যানেজার বলা হবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ইটালীর ওল্ড স্কুলের সাথে জিদানের সম্পর্ক কোথায়? জিদান তো মাদ্রিদ লিজেন্ড। হ্যাঁ, সত্য বটে। কিন্তু জিদানের কোচিং ক্যারিয়ার থেকে খেলোয়াড়ি জীবন সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ছিল ইটালীর ওল্ড স্কুল। ওই সময় সিরি আ ছিল সময়ের অন্যতম সেরা লীগ। বিশ্বের সেরা ট্যাকটেশিয়ানদের মেলা ওইখানে। এরা কোন দর্শন মানে না। এদের খেলার অন্যতম লক্ষ্য, ম্যাচ জিতা। না ড্র কিংবা হারের জন্য খেলে না। তারা জানত কিভাবে ম্যাচ বের করে আনতে হয়। কিভাবে ম্যাচ জিততে হয় শেষবিন্দুটুকু দিয়ে। হিটজফিল্ড আর লিপ্পির ফাইনাল টা তো এখনো বলা হয় চ্যাম্পিয়ন্সলীগের অন্যতম সেরা একটা ট্যকাটিক্যাল ব্যাটল। এই ক্যাটাগরির কোচদের সব থেকে বড় সুবিধে হল তারা তাদের সীমিত রিসোর্স নিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত, শুধুমাত্র প্রতিপক্ষের দূর্বল জায়গা গুলো বের করে। এই সব কোচের বিরুদ্ধে আপনাকে ক্লিনিক্যাল হতে হবে। কারণ দে পানিশ ইন আ ব্যাড ওয়ে। ৯০ মিনিটের খেলায় আপনার সব সময় মনে হবে আপনি জিতে যাবেন কিন্তু দিনশেষে এরাই হাসে। এক ফার্গুসানই কত বার শেষ মিনিটে ম্যাচ বের করে আনল কিংবা লিপ্পির সেমিফাইনালে দেল পিয়েরে সাবস্টিউট করে জার্মানীর সাথে ম্যাচ বের করে আনা। এদের সবার সাথে জিদানের একটা কমন মিল হল, জিদানও জানে কিভাবে ম্যাচ বের করে আনতে হয়। কখনো ডার্টি ওয়েতে কখনো বা সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়ে। কিন্তু যেভাবেই খেলুক না কেন সবাই জানে এরা জয়ের জন্য খেলছে। মরিনহোর মত ড্র এর জন্য খেলে না।
জিদান তার ক্যারিয়ারে ৩টা বিশ্বকাপ জয়ী কোচের অধীনে কী প্লেয়ার হিসেবে খেলেছে। লিপ্পি,জ্যাকে, আর দেল বক্স। তার কোচিং ক্যারিয়ারেও এদের প্রভাব পাওয়া যায়। লিপ্পির স্পেশালিটি ছিল টিম ইউনিট আর রিসোর্সে থাকা প্লেয়ারদের স্ট্রং এবিলিটিগুলোকে টিমের মেইন এট্রিবিউট করা আর সেগুলোই ক্রমাগত ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস করা। জিদানের সাথে মিল পাওয়া যায় কি? ইউরোপের ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট টিম ইন এরিয়াল। তার টিম অবশ্যি ক্রসে ফোকাস করবে। আপনার হাতে যখন এরিয়াল ব্যাটলে জয়ীর মত ২টা কী প্লেয়ার আছে রন আর রামোস সেখানে কেন আপনি এইটাতে ফোকাস করবেন না? আর আমাদের প্লেয়াররাও এই ক্রসেই কমফোর্টফিল করে। যদি ক্রস ট্যাকটিস কাজে না আসে এরা মানে হল আপনি ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে এনাফ প্র্যাকটিস করছেন না। লিপ্পি এই ক্রস ট্যাকটিস দিয়েই ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সমতা এনেছিল। এই ক্রস ট্যাকটিস হল ফুটবলে বেসিক। যাই হোক না কেন এইটা অবশ্যি কাজ করবে আপনি যদি প্রতিদিন ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস করতে থাকেন। এই খানে ব্রুস লি একটা কথা বলে রাখা জরুরী,
I fear not the man who has practiced 10000 kicks once, but I fear the man who has practiced one kick 10000 times.
জিদানও এই কথা মনে প্রানে বিশ্বাস করে আর এইজন্য ম্যাচে ৪৭টা ক্রস করে গোল না পাওয়ার পরেও সে বলে যায়, ক্রস কর।
এইবার আসা যাক, দেল বক্সের ব্যাপারে। জিদানের আগে মাদ্রিদের লাস্ট ডমিনেট কোচ। তার বড় গুণ ছিল ট্যাকটিক্যাল ভার্সেটাইলিটি। একজন ওল্ড ফ্যাশন্ড কোচ হয়েও ঠিকই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে স্পেনকে পজিশনাল ফুটবল খেলিয়েছে। কারণ সেও জানত, তার দলের স্ট্রং জোন কোনটা। ম্যাচ জিতার জন্য আপনাকে থাকতে হবে উইনিং মেন্টালিটি। আর এইটা ট্যাকটিক্যাল কিংবা ভাল প্লেয়ার দিয়ে হয় না। এইটা আশে আপনার চারপাশে থাকা পজিটিভ পিপলদের থেকে। আর এই উইনিং মেন্টালিটি সে পেয়েছে তার বিশ্বকাপজয়ী কোচ জ্যাকের থেকে। যার সম্পর্কে জিদান পরে বলেছিল,
More than anything it’s about instilling a mentality. Before ’98, there wasn’t the mentality, even among the senior players. We were hesitant, unsure of ourselves. Not any more. And success breeds success.
আর এইজন্য ১ গোলে পিছিয়ে থেকেও বারবার জিদান কামক্যাক করে। না এইটা লাক না। এইতা হল আত্মবিশ্বাস। আপনিও যদি কালকে থেকে বিশ্বাস করা শুরু করেন আর জিদানের মত উইং মেন্টালিটি গ্রো আপ করেন আমি বলে দিতে পারি আপনার জীবনেও এই রকম লাকি ঘটনা আসবে।
জিদানের কোচিং ক্যারিয়ারে দিকে তাকানোর আগে আমাদের আসলে ফিরে যেতে হবে তার খেলোয়াড়ি জীবনে। বলা হয়ে থাকে, তার সময়কালীন খেলোয়াড়দের মধ্যে তার IQ ছিল সব থেকে বেশি। ট্যাকটিক্যালি, ট্রফি হয়ত অনেক প্লেয়ারকেই এগিয়ে রাখবে। তাও প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে সবাই তাকে এত সমীহ করত কেন? এর মেইন কারণ হল তার গেইম আন্ডারস্টান্ডিং। সে বুঝতে পারত, কখন এটাক করা উচিত। কখন খেলায় গতি আনা উচিত আর কখন খেলা স্লো করে পজিশন ধরে রাখা উচিত। আর এই সব কারণেই মাঠে তার উপস্থিতি এভারেজ প্লেয়ারদের ও কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিত। তারা জিদানের দিকে তাকালেই বুঝতে পারত জিদান তাদের থেকে কি চায়। তাদের মাইন্ড ক্লিয়ার থাকত, তারা খুব ভাল ভাবে জানত কখন এটাক করতে হবে কখন ডিফেন্স করতে হবে শুধু মাত্র তার বল রিসিভ আর পাস দেখে। আর এইজন্য ফার্গুসান বলেছিল “আমাকে একটা জিদান আর ১০ টা ওডওয়ার্ক দাও আমি তোমাকে ট্রফি দিব”। আর এখন মাদ্রিদের কোচ হয়েও জিদান সেই কাজটাই করে যাচ্ছে। প্রতিটা প্লেয়ারের নির্দিষ্ট কাজ মাঠে। জিদান চায় না এর থেকে কেউ বেশি কিছু করুক আবার এর কম করা মানে মেইন টিম থেকে বাদ পড়া। তারমানে হল, আপনার উপর অর্পিত দায়িত্বটাই আপনি ভালভাবে পালন করবেন। আর এই দায়িত্বটা ঠিক করা হয়, প্লেয়ারদের স্ট্রং জোন আর প্রতিপক্ষের উইক জোনের উপর ভিত্তি করে। এইজন্যই জিদানের দলে কোন ফিক্স একাদশ নেই। একদিন ইস্কোকে দেখা গেলে পরের দিন দেখা যায় এসেনসিও। আর এর সুবিধা পাই খেলোয়াডগুলো। তারা জানে মাঠে তাদের কাজ কি। জিদান জানে দর্শন কখনো আপনাকে ম্যাচ জিতাবে না। শুধু কিছু হাততালি বা বাহবা দিবে কিন্তু মাদ্রিদের মত একটা যেখানে সব গুলো ট্রফি জিতাই লক্ষ্য থাকে, সেখানে এই সব দর্শনের কোন মূল্য নেই। ট্রফি জিতাই ক্লাবের প্রতি ভালবাসা, ক্লিইয়ার মাইন্ড আর প্লেয়াররা। জিদান এই সবই ফোকাস করে। তাই যারা নিজ দায়িত্বে ক্লাব লিভ নিতে চায় তাদেরকে সে খুব একটা গুরুত্ব দে না।
’০৬ বিশ্বকাপের পর জিদানকে খুব সম্ভবত ১ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা করা হয় এই সময় সে বিভিন্ন সমাজমূলক কাজ করে বেড়ায়। রিসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে সে জানায় ওই সময় তার কোন প্ল্যানই ছিল না কোচ হওয়ার। বরং সে অন্য কিছুতে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল আর সেই জন্য ’০৯ সে মাদ্রিদে পেরেজের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দে। বছরখানেক পরে মাদ্রিদের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে পেরেজ তাকে নিয়োগ দে। এই সময় তার কাজ ছিল মরিনহোর মূল দলের সাথে পেরেজের যোগাযোগ রক্ষা করা। কিন্তু এর কোন কাজই তার ভাল লাগছিল না। এর কারণ হল ফুটবল খেলাটাকে সে সব সময় দাবাবোর্ড হিসেবে কল্পনা করত। আর এইখানে সেই সবের কিছু নেই। এই সময়ের জিদানের মনের অবস্থা বুঝাতে তার ভাইয়ের উক্তিটি যথেষ্ট,
After everything he’s lived, he couldn’t stay away.Something would be missing: the pressure, that anxiety before a match, which can only be regained by being a coach.
আর এইটা রিলাইজ করার পর জিদান আস্তে আস্তে মূল দলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে থাকল যেইটা আবার মরিনহো নীতিবিরুদ্ধ। ২০১২ তে এল ক্ল্যাসিকোতে হাফ টাইমে 0-0 গোল অবস্থায় মরিনহো ড্রেসিংরুমে বলছিল আমরা ড্রয়ের জন্য খেলব এবং এর পর রেফারিকে ব্লেইম করব। আর জিদানকে বলল তাদের উৎসাহ দিতে। মরিনহো চেয়েছিল জিদানও তার মত কিছু বলবে। কিন্তু জিদান করল উলটো। প্রথমেই বলল, “You guys played nice and remember, Madrid never play for draw.” আর এইটা শুনেই মরিনহো তাকে ড্রেসিংরুম থেকে বের করে দিল। তবে ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। প্লেয়াররা বুঝল মরিনহো অধীনে তাদের ভাল কিছু হবে না। তারা বিদ্রোহ করল। জিদানের জায়গা হল মাদ্রিদের ইউথ টিমে। আর এইখানে পরিচয় মোরাতা আর জেসের সাথে। তাদের সাথে অয়ান টু ওয়ান সেশনও সে করে। যারা মোরাতা চলে যাওয়ার জন্য তাকে দোষারোপ করে তাদের জন্য তার এই উক্তিটি যথেষ্ট,
I wanted to give him more playing times and I told him too but he is the one who decided to leave not me.
এর পর তো আমরা জানি এখন মোরাতার ক্যারিয়ারে কি চলছে।
’১৩ তে কোচ হয়ে আসল জিদানের গুরু আনচলত্তি। এখনোই মোক্ষম সুযোগ কাজ শিখে নেওয়ার। জিদান চান্সটা লুফে নিল। আর ক্লাসের বেস্ট স্টুডেন্টকে সহকারী হিসেবে নিতে আনচোলত্তিরও কোন আপত্তি ছিল না। কার্লোর অধীনে জিদানের কাজ ছিল, প্রতিপক্ষের উইকজোন গুলো খুজে বের করা আর প্লেয়ারদের মোটিভেট রাখা। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতার পর জিদানের ঠায় হল ক্যাসিলাতে। রিয়ালের বি টিম। কিন্তু পথটা মসৃণ না। প্রথম ৬ ম্যাচে মাত্র ১ ম্যাচ জিতল। তার থেকেও বড় কথা মোটিভেশন অথবা ট্যাকটিক্যাল কোন কিছুই তারপক্ষে আসছিল না। প্রথম ১৫ দিন যাওয়ার পরে সে ভেবেছিল তার মোটিভেশন স্পিচ কাজে আসবে কিন্তু না। জিদান ওই সময় পজিশনাল ফুটবল খেলতে পছন্দ করত।
I want my team to play, spread the ball, build from the back and keep possession.
সে বুঝতে পারল তাকে পরিবর্তন আনতে হবে তার চিন্তাধারার। সে এর পর তার প্লেয়ারদের স্ট্রং জোন নিয়ে কাজ করা শুরু করল সবারই স্ট্রং জোন আর উইক জোনের ডেটা সে জোগাড় করল। আর এইটার উপর বেস করে দাঁড়াল মডার্ন ডিরেক্ট ফুটবল। সে ডেভেলাপ করল ৪-২-৩-১ আর জিদানের পারসোনাল রিকুয়েস্টে লোনে আনা হয় ম্যানিউর রাইট ব্যাক ভারেলাকে। তা কি হয়েছিল পরে?পরবর্তী ৪৭ পয়েন্টের ৩৭ পয়েন্ট তুলে নিয়ে লীগে গর্বের সাথে ষষ্ট পজিশন অর্জন করতে সক্ষম হল লোনে আনা ভারেলা ছিল ওই সিজনে বেস্ট সাইনিং। কিন্তু এইখানে জিদানে শিক্ষাটা হল, প্রথমবারের মত সে ইটালীয়ান ডিরেক্ট ফুটবল মডার্ণ ওয়েতে ইমপ্লিমেন্ট করল। যেইটা করেছিল, গার্দিওলা ক্রুইফের মর্ডান পজিশনাল ফুটবল। কিন্তু এর মধ্যে বাদ সাধল স্প্যানিশ লীগ। তারা তার কোচিং ব্যাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলল। এই সমস্যায় বার্সা লিজেন্ড ক্রুইফকেও পড়তে হয়েছিল। তখন সে বলেছিল,
I’d much prefer a good coach without their badges than a bad one with them who hasn’t got a clue.
জিদান কোচিং ব্যাজ নিতে ফ্রান্সে চলে গেল। তার সাথে ব্যাজ নিল আরেক ফ্রান্স লিজেন্ড ম্যাকেলেলে তার খুব কাছের বন্ধু। তা ফাইনাল থার্ড ইয়ার ব্যাজ নিতে সে তখন ছিল বায়ার্নে। ওই সময় পেপের সাথে সে একান্ত কিছু সময় কাটায়। সে পেপের ট্রেইনিং সেশন দেখে আর নোট ডাউন করে নিতে থাকে। এর পর তাদের মধ্যে কিছু ট্যাকটিক্যাল আলোচনা হয়। জিদান প্রথমবারের মত আইডিয়া পাই নিউম্যারিক্যাল সুপিউরিটি। পজিশনাল ফুটবলের জন্য যেইটা কী থিংস। পেপ তাকে দেখায় কিভাবে নিউম্যারিক্যাল সুপিরিওটি আদায় করে নিতে হয়। জিদান এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিল পিএসজি জুভের সাথে ম্যাচ বের করে আনতে। লেফট উইং ছিল তাদের দুর্বলতা। আর বারবার সেখানে ওভারলোড করে দিয়ে সেই ঠিকই ম্যাচ বের করে এনেছিল। পেপ সম্পর্কে জিদান বলেছিল অই সময়,
Bayern’s game was already fast and attacking.Pep has taken it to the next level with that hint of genius. I love watching to see how he works. He inspires me.”
এর কিছুদিন পর জিদান দেখা করে বুন্দেসলীগার দ্বিতীয় বিভাগের কোচের সাথে(দলের নাম কিংবা কোচের নাম কোনতাই মনে নাই)। এই কোচের বিশেষত্ব ছিল, উনি কম বাজেটে দ্রুতগতির কাউন্টার এটাকিং টিম করতে সিদ্ধহস্ত। জিদানের ডিরেক্ট ফুটবলে এইজন্য কম বাজেটের ভাস্কেস এসেন্সিও দিয়েই হয়ে যায়।
তবে জিদানের ক্যারিয়ারে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হল মার্সেই বিসেলার সাথে মিটিং। মূলত তার প্লেয়িং স্টাইলে এর প্রভাবেই পাওয়া যায়। বিসেলার মূল থিম ছিল,”Stay on your own track” এন্ড খেয়াল করলে মাঠে দেখা যাবে জিদান বারবার এই কথা বলে। ফরমেশন যাই হোক না কেন, জিদান কখনো বেসিক প্রিন্সিপাল ভুলে যায় না। ফুটবলের সেই বেসিক প্রিন্সিপাল গুলো হল , নিউম্যারিক্যাল সুপিউরিটি অভার দ্যা পিচ এন্ড ইম্পোটেন্স অফ প্লেয়িং বিট উইন লাইনস। আর এই জন্যি হামেস থেকে ইস্কো কে বেশি পছন্দ জিদানের। আর এই সবের জন্য খেয়াল করলে দেখা যাবে, রিয়াল গোল খাই ইন্ডিভিডিয়াল ভুলে বেশিরভাগ সময়। খুব কম সময় জিদান ট্যাকটিক্যাল ব্যাটল হেরেছে।জিদান যখন মাদ্রিদের দায়িত্ব নে, তখন তার কথা ছিল খুবই সাধারণ। আমার পুরো ২৩ জনের স্কোয়াডেই লাগবে। এবং আমি সবাইকে তোমাদের তোমাদের বেস্ট ভার্সনে দেখতে চাই। তোমরা তোমাদের কাজ করে যাবে। মাঠের খেলা আমি দেখব। আমি তোমাদের সক্ষমতাকে বিশ্বাস করি তোমরা বিনিময়ে আমার সিস্টেম আমার গেইম রিডিংকে বিশ্বাস কর।What I will do this will be the best for everyone. For fans, for players and for clubs.
লুইজ মিগুয়েজের, দেল বক্সের পর খুব সম্ভবত আমাদের ইতিহাসে সেরা কোচ হবে জিদান। আমরা কখনোই কাউন্তার এটাক টিম ছিলাম না আবার পজিশনাল বেসড দলও না। আমাদের ঐতিহ্য ছিল ডিরেক্ট ফুটবল। আমরা খালি জিততেই জানি। এই হেইঙ্কেন্স ও যখন আমাদের কোচ ছিল আমরা ডিরেক্ট ফুটবল খেলেছি। দুই দশকে ১০-১৩ ম্যানেজার হাত বদলের পর খুব সম্ভবত আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছি। ফার্গুসানের ২৬ বছরের ক্যারিয়ারে বড় সম্বল ছিল তার ট্যাক্টিক্যাল ভার্সেটাইলিটি। এই জন্য যুগের পরিবর্তনেও তার মানিয়ে নিতে কোন সমস্যা হয় নি। ডিরেক্ট ফুটবল প্রিয় কোচদের কোথাও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। ডিরেক্ট ফুটবল দল কাল ভেদে সব সময় কার্যকর।
এই পোস্টে মোটামুটি ৪,৫,৬,৭,৮ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। ১,২,৩ নিয়ে দুই কিস্তিতে লিখার প্ল্যান আছে। এবং সত্য কথা বলতে জানলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন, জিদান শুধুমাত্র ফরমেশন প্লেয়ার না এদের পরিসংখ্যান, রেকর্ড এই সবের জন্য সায়েন্সেরও দখল নিয়েছে। জিদান আর তার ট্যাকনিক্যাল টিম প্রতি ম্যাচে একচুয়েলি কি পরিমাণ পরিশ্রম করে সেইতা জানলে আপনাদের মনে হবে, প্লেয়াররা কিছুই করে না। ওদেরকে খাইয়ে দেওয়া হয় সব। বর্তমানে ফুটবলবিশ্বে একটা কথা খুব প্রচলন,”Zidane knows everything about you team”. এইটা শুধু সম্ভব হয়েছে তার দক্ষ ট্যাকনিক্যাল এন্ড বেস্ট ম্যানের জন্য ।তাছাড়া মোটামুটি জিদানের ক্যারিয়ারে তার সময়ের সেরা কোচ + বর্তমান সময়ের সেরা কোচদের পাশে পেয়েছে । আর এদের নিয়েই থাকবে জিদানের গেইম প্রিপারেশন আর মাস্টারপ্লেইন।
৭৫ বছরের অনেকে এর থেকেও লিজেন্ডারি টিম পেয়েছিল, অনেকে এর থেকেও প্রচুর টাকা ঢেলেছিল কিন্তু একমাত্র জিদানই মাত্র ৩টা ইউসিএল টানা জয়ের সামনে। এইটা ফ্লুক বা লাক না। তার জীবনে চলার পথে সে বেস্টদের পেয়েছে। এইটা তাদের আশীবার্দ।