রিয়াল মাদ্রিদের কর্নার ট্যাক্টিক্স (ভাগ্য নাকি অনুশীলন?)
কর্নার ট্যাক্টিক্স ফুটবলের সম্ভবত সব থেকে পুরান ট্যাক্টিক্সগুলোর অন্যতম। মাঝখানে টিকিটাকার তোপে এই সেট পিস ট্যাকটিস বোধহয় প্রায় সবাই ভুলে যেতে বসেছিল। বর্তমানে কন্তে আর জিদানের হাত ধরে তা আবার সম্ভবত জনপ্রিয় হতে চলছে। অনেকেই বলে থাকেন জিদানের এই ট্যাকটিসটা পিউর লাক কারণ গত সিজনে শেষ ১০ মিনিটেই সম্ভবত এই ট্যাক্টিক্স সব থেকে কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। আমার এই লেখাটি মূলত হবে জিদানের এই সেট পিস ট্যাকটিসের উপর।
সেট পিস দুই ধরণের একটা হল কর্নার কিক, অন্যটা ফ্রিকিক।
প্রথমেই বলে রাখি জিদান মরিনহো কিংবা পেপের মত হয়ত টেকনেশিয়ান না কিন্তু তার মূলমন্ত্র হল পরিশ্রম। জিদান পরিশ্রমের ফসল। তার ফরমেশন, খেলার স্টাইল সব কিছু নির্ভর করে প্র্যাকটিসের উপর। আপনি যত প্র্যাকটিস করবেন তত ধারালো হবেন। জিদান মূলত সেট পিস ট্যাকটিস কাজে লাগানোর আইডিয়াটা পায় ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে রামোসের সেই লাস্ট মিনিটের গোলে। ধারণা করা যায় জিদান এই আইডিয়াটা এডাপ্ট করেছে তার গুরু আনচেলোত্তির কাছ থেকে।
কর্নার কিক ট্যাকটিসের সময় দেখা যাবে রিয়ালের ৩/৪ টা প্লেয়ার বক্সের মধ্যে মার্ক করা অবস্থায় থাকে। মজার ব্যাপার হল এদের মধ্যে কিন্তু রামোস থাকে না। রামোস সব সময় ডি বক্সের কাছাকাছি থাকে। তারা এমনভাবে দাঁড়ায় যাতে মনে হয় কর্নার টেকার তাঁদের মধ্যে বলটা ফেলবে। এদের মধ্যে একজন হঠাৎ কর্নার টেকার বরাবর দৌড় দেয়। কে দৌড়টা দিবে এইটা একচুয়েলি ঠিক করা থাকে না, এইটা প্রতিপক্ষকে অবাক করে দেয়ার জন্য করা হয়। যে ফাঁকা থাকে সেই দেয়। সাধারনত রোনালদো আর বেলই কাজটা করে থাকে। এইখানে তাঁদের দৌড়ের মূল উদ্দেশ্য কোনভাবেই বল উইন করা না। এমনকি অনেক সময় যে তারা লাফ দেয় সেটা শুধু দেখানোর জন্য। বলটা উইন করার কোন ইচ্ছেই তাদের থাকে না। একমাত্র কোন ভাবে যদি তারা ফ্রী স্পেসে থাকে কেবল তখনই তারা হেড করে অথবা অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থাতাতে থাকা প্লেয়ারকে বল পাস দেওয়ার চেষ্টা করে।
যদিও অনেকের মতে এটা হয়তো কিলার সিচুয়েশন না। কিলার সিচুয়েশন হল যখন প্লেয়ার সামনে দৌড়ানোর ফলে যে স্পেসটা ক্রিয়েট হয় মাঝে সেটাতে ক্রস করা। এবং সাধারন সেটা কে কভার করে? সম্ভবত নামটা না নিলেও চলবে, সবার বুঝে যাওয়ার কথা। তাহলে দেখা গেল জিদানের কর্নার ট্যাকটিস সফল করতে গেলে ৩ ধরনের প্লেয়ার লাগবে আমাদের । প্রথমতঃ যে স্পেস ক্রিয়েট করবে টার্গেট ম্যান হিসেবে। সাধারনত সেটা রোনালদো করে থাকেন। দ্বিতীয়তঃ যে পারফেক্ট কিলার পাসটা দিবে, আর এর জন্য রয়েছে স্পেশালিস্ট ক্রুস। থার্ড হল যার হেড একুরেসি ভাল। এবং এই কাজটাই করে থাকেন রামোস।
এবার আসা যাক আমাদের ফ্রিকিকের সময় কেমন দাঁড়ায় লাইন আপ। আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি রিয়াল অফসাইডে গোল দেয়। হ্যাঁ, এইটা সত্য। কারণ, এই ট্যাকটিস ফলো করতে গেলে অফসাইড হবার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। ফ্রি কিক নেওয়ার সময় দেখবেন রিয়ালের ৩ টা প্লেয়ার অলওয়েজ অফসাইডে থাকে। আর প্রতি ফ্রিকিকের আগে রামোস একটা জায়গায় মার্ক করে দাঁড়ায় থাকে কিছুক্ষণ। এইটা জাস্ট ইংগিত করে ক্রুসকে বলটা এই জায়গায় ফেলার জন্য। খোলা মাঠে আপনাকে যদি কোন লক্ষ্যবস্তু না দিয়ে কিছু টার্গেট করতে বলা হয় এইটা আপনার জন্য অনেক কঠিন হবে কিন্তু আপনার সামনে টার্গেটার একটা প্রতিচ্ছবি দেওয়া গেলে মানসিকভাবে আপনি ওই টার্গেটে বল ফেলতে সক্ষম। আর এই কাজটাই করে থাকে রামোস। রামোস নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রুসকে বলে দেয় এই জায়গায় বল ফেলতে তাহলে গোল পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। আর ক্রুস ও বেশির ভাগ সময় সেই জায়গা বরাবর বল ফেলার চেষ্টা করে।
এইবার আসা যাক অফসাইড ট্র্যাপটা আসলে কিভাবে ব্রেক করে মাদ্রিদ। আগেই বলেছিলাম যে, ৩ জন অফসাইডেই দাঁড়ায় আর ওয়ালের সামনে দাঁড়ায় ২ জন বল কিক হওয়ার পর এই ২ জন ইন থেকে দৌড় দেয় আর এই ২ জনকে মূলত কভার দিতে গিয়েই প্রতিপক্ষ নিজেদের অফসাইড ট্র্যাপ নিজেরা ভেঙ্গে ফেলে। এই কারণে প্রায় সময় দেখবেন রিয়ালের এক সাথে অনেক জন ফ্রী থাকে সেট পিসে।
তো আমরা এই ট্যাকটিসটা থেকে আমরা কি জানলাম ? এই ট্যাকটিস কি যে কেউ ফলো করতে পারবে? উত্তর হল,’হ্যা’ তবে এইটার সাফল্য নির্ভর করছে আপনি কতটুকু অনুশীলন করেছেন তার উপর। এখন আমাকে একটা টিম দিয়ে যদি এইটা করতে বলা হয় প্রথমে যা হবে তা হল শুধু অফসাইড। কারণ কোন মোমেন্টে প্লেয়ার ইন করবে সেইতা আমার প্লেয়াররা বুঝবেই না । তাই বলা যায় “লাক না রিয়ালের সাফল্যের চাবিকাঠি হল পরিশ্রম “। রিয়াল রিভুলেশনারী কোন ট্যাকটিক্যাল চেঞ্জ আনেনি কন্তের চেলসির মত। তারা সেই প্রাচীন প্রবাদটিই মেনেই কাজ করে গেছে,”পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি।”
আর সবার শেষে বলি কেন এই ট্যাকটিস গুলো শেষ মিনিটেই কাজে লাগে । আমার একটা ধারণা হল শেষ মিনিট গুলোতে প্রতিপক্ষরা প্রচন্ড চাপে থাকে। আর ওই সময় মনে হয় রোনালদো বেলদের মতোন মেইনম্যান যারা ওদের কে টার্গেট করেই বল দেওয়া হবে । আর রোনালদোরাও সেই উদ্দেশ্যে দৌড় দেয় শুধু তাদেরকে ধাধায় ফেলার জন্য। সম্ভবত এই সব কারণই এই ট্যাকটিস লাস্ট অন্তিম মুহুর্তগুলোতে বেশি কার্যকর।