রিয়াল বনাম লিভারপুল(পোস্ট ম্যাচ এনালাইসিস)
অসাধারণ একটি ফাইনাল ছিল। অসাধারণ গোল, কিছু অমার্জিত ভুলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল। প্রথমেই আমরা একটু চোখ বুলিয়ে আসি, জিদানের এই সিজনের ট্যাকটিক্যাল এপ্রোচে। সিজনের শুরুর দিকে, জিদান তার ট্যাকটিক্যাল এপ্রোচ নিয়ে বেশ সমালোচিত হচ্ছিল। বিশেষ করে টটেনহামের সাথে ম্যাচে। সে ম্যাচে পচ্চেতনিনো রিয়ালের দুই প্রান্তের স্পেসকে খুব সুন্দর করে ব্যবহার করে। এইখানে মনে রাখা উচিত যে, সেই ম্যাচে রিয়ালের রাইট ব্যাক হিসেবে হাকিমি খেলে। ঝামেলা শুরু হল, পিএসজিও একই ট্যাকটিস ব্যবহার করে মাদ্রিদকে ঘায়েল করার জন্য। জিদান এই সমস্যাটি সমাধান করে পরের লেগেই দুইটা ডিফেনিসভ মিড রেখে। হেইনকেসের বায়ার্নের বিপক্ষে ইস্কোর ইনজুরীতে অন্য কোচ হলে কোভাচিচকে নামাত। জিদান নামিয়েছিল এসেন্সিও কে ফ্রী রোল দিয়ে। কারণ মাদ্রিদ যে পজেশনটা ধরে রেখেছিল জিদান তাতে খুশি পাশাপাশি সে চায় খেলায় আরো গতি আসুক। এসেন্সিও ডিফেন্সিভ এবিলিটিও আছে। পরের লেগে জিদানের ট্যাকটিস সম্পূর্ন রকম মারা খেয়ে যায় বায়ার্নের কাছে। তারপরেও তারা কিভাবে যেন ফাইনালে উঠে যায়।
অন্যদিকে, ক্লপ এখনো পর্যন্ত যাদের বিপক্ষে খেলেছে, সে জানত সবার একটা নির্দিষ্ট সিস্টেম আছে। যেমন গার্দিওলার বিপরীতে সে জানত, গার্দিওলা পজেশন বেসড ফুটবল খেলবে তাই কোনভাবে যদি তাদের প্রথম হাফে অনেক গোল দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে জয়ের সম্ভবনা বেড়ে যাবে। আবার মরিনহোর বাস ট্যাক্টিসের বিপক্ষেও সে জানত, তারা সব সময় কাউন্টার দেওয়ার চেষ্টা করবে। ক্লপের সমস্যাটা হল মাদ্রিদের সিস্টেমে। মাদ্রিদ সিস্টেম হচ্ছে আনপ্রেডিক্টিবিলিটি। আপনি জানেন না তারা কোন সিস্টেমে খেলবে। সহজ কথায় আপনার কোন ধারণা নেই তারা কিভাবে খেলে। মাদ্রিদ অনেক অভিজ্ঞ আবার তাদের হাতে এমন প্লেয়ার আছে যাদের উপর ভর করে জিদান যেকোন সময় যেকোন সিস্টেম সহজেই বানাতে পারে। জিদান অলরেডি জানে তাদের প্রেস কিভাবে সামাল দিতে হবে । দেখার বিষয় ছিল, ক্লপের এই গতি রিয়ালকে আদৌ কোন সমস্যাই ফেলতে পারে কিনা।
লিভারপুলের ম্যাচ গুলো দেখলে দেখা যায়, তাদের মুল ভিত্তি হচ্ছে তাদের ফ্রন্ট থ্রি। এই ফ্রন্ট থ্রিই তাদের মূল এটাকিং এবং ডিফেন্সিভ সিস্টেম। আর এই ফ্রন্ট থ্রি কোন একজন না থাকলেই হলেই লিভারপুলের শক্তি অর্ধেক হয়ে যায় । যেমনটা রোমার বিপরীতে সালাহকে নামানোর পর হয়েছিল। তারমানে দেখা গেল, ক্লপের হাতে অপশন ছিল কম। তার পক্ষে অন্য কোন সিস্টেম ডিপ্লয় করাও সম্ভব না। আবার আরো একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার ছিল, তাদের গোল করার মুহুর্তের সময়গুলো। বেশিরভাগ গোলই তারের দিয়েছে প্রতিটা হাফের প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে। এর অর্থ হল, আপনি কোন ভাবে যদি তাদের ম্যাচে ৪০ মিনিট আটকাতে পারেন আপনার জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, রিয়ালের স্কোয়াড হল পুরোপুরি ভিন্ন। সবার অভিজ্ঞতা আছে এবং তাদের সবার আলাদা আলাদা রোল আছে নির্দিষ্ট দলে। যেমনঃ ইস্কো বল হোল্ড করে রাখবে , প্রেস ব্রেকের জন্য বিটুন দ্যা লাইনে দাঁড়াবে। ক্রুস আর মদ্রিচ বল ডিস্ট্রিবিউট করবে, রামোস এগ্রেসিভ ভাবে প্রেস করবে, ভারানে পজেশন হোল্ড করবে কারণ সে ইন্টারসেপেট ভাল, দুই ফুলব্যাক উপরে উঠে তাদের আক্রমনের দক্ষতা শো করবে আর সে কাজটা শেষ করবে রনের গোলস্কোরিং রেকর্ড। এইটাই হল মাদ্রিদের বেসিক সিস্টেম। এইছাড়া ও জিদানের হাতে আছে এসেন্সিও যদি সে পজেশনের সাথে সাথে হালকা পেস চাই আবার পুরো ডেডলি কাউন্টারের জন্য তারা চাইলে বেল, ভাসকেস কেও নামিয়ে দিতে পারে। আর সাধারণত জিদান সেইতা করে সেকেন্ড হাফে ম্যাচের অবস্থা বুঝে। তাই ক্লপকে শুধু প্রথম হাফে না সেকেন্ড হাফে কিংবা শেষ মুহুর্তের সময় পর্যন্তও ভাবা লাগত।
ফুটবলকে সাধারনত আমরা ফিলোসফিক্যাল ব্যাটল বলি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এই ফিলোসফিক্যাল যুদ্ধের সাফল্য নির্ভর করে প্লেয়ার, কোচের আত্মবিশ্বাসের উপর। মাদ্রিদ কখনো ডিফেন্সিভ খেলে না। তারা যেইটা করে, দল হিসেবে এটাকে যায় দল হিসেবে ডিফেন্স করে। যখন মাদ্রিদ দল হিসেবে ডিফেন্স করে তখন তাদেরকে গোল দেওয়া যায় না। বেশির ভাগ গোল তারা মূলত খাই ট্রাঞ্জিশনের সময়। কাউন্টারে। তারমানে, মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলতে গেলে আপনাকে ভুল করা চলবে না। দলের কোন প্লেয়ার এতটুকু ভুল করলে মাশুল দিতে হবে পুরো দলকে।
আপনার ট্যাকটিস অসাধারণ হতে পারে কিন্তু একক ভুলেই শেষ হয়ে যেতে পারে পুরো ট্যাকটিস। রিয়াল মাদ্রিদের এই সিজনের খেলা দেখলে বুঝা যাবে তারা কতটা ইন্ডিভিডীয়াল প্লেয়ারের উপর নির্ভর ছিল। বেস্ট প্লেয়ার আর এভারেজ প্লেয়ারের মধ্যে পার্থক্য হল, বেস্ট প্লেয়ার ভুল কম করে। আর ভুল করলেও সে তাড়াতাড়ি স্টেপ আপ করে। যেমনটা হয় রন গোল মিস করলেও সে সবাইকে বলে আরো বল দিতে। আত্মবিশ্বাস হারায় না। মাদ্রিদের স্কোয়াডে থাকা ১৫টা প্লেয়ারই বেস্ট প্লেয়ার। তারা জানে এই সব ম্যাচেই পরিবর্তন করে দিতে পারে তাদের ক্যারিয়ার। আর এই বিশ্বাস থেকেই তারা দল হিসেবে চেষ্টা করে যতটা সম্ভব প্রতিপক্ষের থেকে কম ভুল করা যায়। আর এই জন্য আমরা মাদ্রিদের সাথে ম্যাচে দেখি হয় মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা ভুল করে না হয় প্রতিপক্ষের প্লেয়াররাই ভুল করে ম্যাচটিকে হাস্যকর করে তুলে।
জিদান জানত ক্লপের প্রেসিং ছাড়া কোন উপায় নেই। তাই মোটামুটি সবার অনুমেয়ই ছিল জিদান তার প্রিয় ৪-৩-৩ ডায়মণ্ড এই ব্যবহার করবে কারণ জিদান ইস্কোকে দিয়ে তাদের হাই প্রেস বন্ধ করতে চাইবে। অন্যদিকে ক্লপের অস্ত্র ছিল দুই উইংব্যাকের ফেলে আসা স্পেস। এইটা মাথায় রেখে জিদান প্রথম দিকে মার্সেলোকে বেশি উপরে উঠতে মানা করে দিয়েছিল বরং খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রথম ১৫ মিনিট সালাহকে মার্ক করেছিলো মার্সেলোই । সালাহ বার বার কাট ইন করায় বাম প্রান্তে ওয়াইড এরিয়ায় প্রচুর স্পেস পাচ্ছিল আরনোল্ড। সম্ভবত ১৭ মিনিটের দিকে একটা শট ও নে যেইতা নাভাস অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গ্রিপ করে। খেলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে লিভারপুল তাদের প্রেসিং গেইম শুরু করে। কিছু কিছু জায়গায় তারা ৩ বনাম ১ করতেও সক্ষম হয় এইজন্য প্রথম হাফে ক্রুস, ইস্কো বারবার বল হারাচ্ছিল। অন্যদিকে ইস্কোর ফ্রী রোল লিভারপুলকে আসলেই ভোগাচ্ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে। ম্যাচ জিততে হলে আমাদেরকে রিস্ক নিতেই হত ইস্কোর। ইস্কোর রোলটা ছিল ক্লিয়ার। বল পেলেই খেলার টেম্পো স্লো করে দেওয়া। আমি প্রি ম্যাচ এনলাইসিসে বলেছি, আউটনাম্বার হয়ে গেলে সব থেকে সহজ কাজ লিভারপুলকে আটকানো তা হল বলটা তাদের পায়ে দিয়ে দেওইয়া। তারা বল পায়ে ভাল না। গত সিজনেই মাদ্রিদ দেখিয়েছে জুভের বিপক্ষে হাইপ্রেসে তারা কতটা সেরা। আর এইবারও সেইটা করে লিভারপুলের ডিফেন্ডাররা উপরে বল পেলেই তারা একসাথে কয়েকজন প্রেস করত। আর এতে তারা লং বল খেলতে বাধ্য হল। ম্যানসিটির বিপক্ষে লিভারপুলের ট্যাকটিসই ছিল লং বল আর সেকেন্ড বল উইন। মাদ্রিদ এইটাও কাউন্টার দেইয়। তারা ও সেকেন্ড বল উইনের জন্য যায় অথবা বল লিভারপুলকেই রিসিভ করতে দে তারপরে তাকে প্রেস করা শুরু করে যাতে প্লেয়ারটি হয় বল হারাবে না হয় ব্যাক পাস করবে। ম্যাচের প্রথম ২৫মিনিট এইভাবেই চলতে থাকে। খেলা ঘুরে যায় মূলত ২৭ মিনিটে সালাহর ইনজুরীর মধ্যে দিয়ে।আগেই বলেছি, লিভারপুলের মূল শক্তি ছিল তাদের ফ্রন্ট ৩ এর প্রেসিং। সালাহ চলে যাওয়ার আর তাদের বেঞ্চে কোয়ালিটি প্লেয়ার না থাকায় মূলত ম্যাচ থেকে এইখানেই ছিটকে পরে লিভারপুল। সালাহর জায়গায় ক্লপ মাঠে নামায় লালনাকে আর ৪-৪-২ ডিফেন্সিভ শেইপে প্রেস করতে থাকে। কখনো কখনো কাউন্টারের জন্য সুযোগ খুঁজে। অন্যদিকে, মাদ্রিদের ইনজুরীতে পড়ে কার্ভা। কিন্তু এতে একটুও বিচলিত না হয়ে জিদান নামায় নাচোকে। ওই যে বললাম দুই দলের মধ্যে মূল পার্থক্য হল তাদের বেঞ্চ। মাদ্রিদের বেঞ্চও ছিল লিভারপুলের মেইন একাদশ থেকে অনেক অভিজ্ঞ।
এইদিকে সালাহ চলে যাওয়ায় মাদ্রিদ আসতে আসতে খোলস থেকে বের হতে শুরু করে। সালাহ যাওয়ার পরের মিনিটেই মার্সেলো নাচোর অবস্থান হয় পিচ হাই আপে একদম ওয়াইড এরিয়ায় অর্থ মাদ্রিদ এখন সেকেন্ড গিয়ারে। এবং তারা তাদের এটাকিং ফরমেশন দাঁড়ায় ২-৩-৫। দুইজনের ফুলব্যাক উপরে থাকায় মদ্রিচ আর ক্রুসকে এই জায়গায় কিছুটা ডিফেন্স সাহায্য করতে হয় যেইটা তারা খুব ভালভাবেই করেছে।এর পরেই শুরু হয় মাদ্রিদের বল রোলিং খেলা, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বল বারবার পাস করা। আবার প্রেস করলে ব্যাক পাস লিভারপুলের প্লেয়ারদের সত্যি ক্লান্ত করে ফেলছিল।আর মিলনারকে বলা হয় ডান প্রান্তে আরনল্ডকে সাহায্য করতে। লিভারপুলের তখন একমাত্র অস্ত্র ছিল কাউন্টার এতাক কিংবা মার্সেলোর ফেলে আসা স্পেসকে ব্যবহার করা। বাট যা সবাই বলেছিল আগে, এই সমস্যার সমাধান হল ক্যাসে কে ফিক্স করে রাখা। যাতে সে কোন ভাবেই উপরে না উঠে ১ বনাম ১ সে সেরা। জিদান সেইম কাজটি করেছে। তাই লিভারপুলের কাউন্টার এটাক ছিল ভারসাম্যহীন। প্রথম হাফ শেষ হল, 0-0 তে।
দ্বিতীয় হাফ, জিদান তার প্লেয়ারদের বলল আরো প্রেস করতে। এইবার করিয়াসের ভুলে গোল পেয়ে যায় বেঞ্জু। মজার ব্যাপার হল, সবাই দেখল তার সামনে বেঞ্জু আছে শুধু মাত্র সে নিজে দেখল না। এইটা হয়ত এভারেজ প্লেয়ার আর গ্রেট প্লেয়ারের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দে। করিয়াস ছিল নার্ভাস। সহজ বল গ্রিপ করে আর এই দিকে বেঞ্জু তার কাছাকাছি গিয়ে গতি কমিয়ে দিয়ে ৫০-৫০ সিচুয়েশন সৃষ্টি করে। বেঞ্জু আগেই বুঝতে পেরেছিল গোলকিপার চিন্তিত। এবং সে মোটামুটি সিউর ছিল, করিয়াস বল রোল করবে আরনল্ডকে। ডেল বলে গোলকিপারের যেইটা করা উচিত বলটা ধরে কয়েক সেকেন্ড ওয়েট করে তারপর বেস্ট পাসিং অপশন খোজা । কিন্তু এই সব বড় ম্যাচে টেনশনে সে ভড়কে গিয়েছিল।বেঞ্জু ঠিকই তার ডান পা টি বাড়ায়, এইখানে মজার ব্যাপারটি হল সে যদি বাম পাটা বাড়াত বলটা আবার করিয়াসের কাছে যেত।বেঞ্জু ঠিকই এন্টিসিপেট করে সিনায়ারিওটা। আর এই জন্য এইটা পারফেক্ট কর্নার দিয়ে গোল হয়। এই কাজটিই করেছিল পচ্চেতিনো হাকিমির উপর আবার এলেগ্রিনে ভ্যালোহোর উপর যাতে নার্ভাস হয়ে নাভাস ২টা গোল খাওয়াই, সেইম ট্যাকটিস ফলো করেছিল হেইনকেনসো দ্বিতীয় লেগে ডান প্রান্তে বারবার টার্গেট করে।
এর কিছুক্ষণ পরেই গোল খেয়ে বসে রিয়াল। ডিফেন্সিভ ভুল মার্সেলোর। যেইটাকে আগেরদিন ক্লপ বলেছিল “a little bit chaos“। জিদান গোল খাওয়ার পর পরেই বেঞ্চের দিকে তাকাই বেলকে প্রস্তুত হতে বলে। তার মানে, জিদান এখন ক্লান্ত লিভারপুলের উপর তার তুরুপের তাস ব্যবহার করবে। দেখার বিষয় ছিল ব্যাপারটি ক্লপ কিভাবে সামাল দে। প্রথমত তার হাতে এমন কোন খেলোয়াড় ছিল না যে বেল রন দুইজনকে একসাথে সামাল দিবে তার উপর তারা ছিল ক্লান্ত সব মিলিয়ে মাদ্রিদের যেইটা করা লাগত তা হল আরেকটি গোল। বেল সেইটাই করল ৩ মিনিটের মধ্যেই। অবিশ্বাস্য একটা গোল দিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ইন্ডিভিডুয়াল পার্থক্য তুলে ধরল। বাকী অর্ধটা মানে অনেকবার চেষ্টা করলেও করিয়াসের আরেকটি ভুলে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এই সব বড় ম্যাচে সমস্যা হল, আপনি একবার ভুল করলে সেইটা সারাক্ষণ আপনার মাথায় ঢুকে যাবে। আপনি বাকী ম্যাচে কোনভাবে সেইটা মাথা থেকে সরাতে পারবেন না। তাছাড়া করিয়াসের রিএকশন যে খুব একটা ভাল না সেইটা সবাই জানে। বেল সেই ৫০-৫০ সিচুয়েশনকে আবার কাজে লাগাল। প্রথমত টেনশন, তার উপর বল গ্রিপ করবে নাকি বাইরে পাঠাবে নাকি পাঞ্চ করবে এই সব চিন্তা করতে করতেই নিজের জালে বল ঢুকিয়ে দে করিয়াস। জিদানের এই ট্যাকটিস নতুন নয়। তারা মাঠে সব জায়গায় ৫০-৫০ সিচুয়েশন সৃষ্টি করতে চাই আর এই ৫০-৫০ চান্স গুলো জিততে চাই ইন্ডিভিডিয়াল ব্যাটল দ্বারা।
মাদ্রিদ জানত করিয়াস ভাল গোলকিপার না তাই মাদ্রিদের সব প্রেশার ছিল গোলকিপারই উপর। আগের বার তারা করেছিল পিএসজির মুনিয়ারের বিপরীতে। তাদের ডান প্রান্ত দূর্বল হয়ে যাওয়ায় তাতে জিদান ওভারলোড করে দিয়েছিল শেষ মুহুর্তে । ৩০ মিটার কাছাকছি দূর থকে শট গোল। তবে আমার মতে এইটা আটকানোই যেত কিন্তু ওই যে, গ্রেট আর এভারেজের মধ্যে পার্থক্যের জন্যি তো এই ম্যাচ গুলো। তাই তো পুরো সিজন শেষে এই সব ম্যাচে পারফরম্যান্স দেখে আমরা যাচাই করি কে ভাল আর কে খারাপ। এই সব ম্যাচে একটা খারাপ সিদ্ধান্ত আপনার পুরো ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করতে পারে।
পরিশেষে, বলা যায়, জিদান ট্যাকটেক্যালি ক্লপকে আউটপ্লে করতে পারেনি। বরং জিদানের হাতে ট্যাকটিক্যাল ছাড়া ও অনেক অপশন ছিল যেইটা ক্লপের হাতে ছিল না। কম বাজেটের টিম গুলো সাথে বিগ টিম গুলোর পার্থক্য হয় এইটাই। জিদান বায়ার্নের বিপরীতে সাফার করেছে কারণ হেইনকেনসও তার মত প্ল্যান করে খেলে। আর ট্যাকটেক্যালি ব্যাটল হেরে গেলেও অনেক সময় আপনি ম্যাচ জিতে নিতে পারেন কারো অসাধারন পারফরম্যান্স ধারা। জিদান সেই কাজটিই করে তবে নিজের মত করে। আপনি যখন ১১টা ট্যালেন্টকে একসাথে খেলাবেন এবং তাদেরকে তাদের বেস্ট পজিশনে খেলাবেন তারা সবসময় ভাল খেলবে। আর গ্রেট প্লেয়ারদের গুণ হল তারা উইনার তার খালি শুধু জিততেই চাই। জিদান ২ বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা খেলোয়াড়। সবাই যেভাবে অনুমান করেছিল জিদান সেই কাজটিই করেছে। ফুটবলের বেসিক জ্ঞান দিয়ে হারিয়েছে ক্লপের গেগেইনপ্রেসিংকে। এইখান থেকে আমরা দেখতে পাই, খেলোয়াড়ি জীবনে তাকে কেন গ্রেট প্লেয়ার বলা হত। সে সব থেকে ফুটবল ভাল বুঝে । কোন সময় কাকে পরিবর্তন করলে কোন ধরণের সুবিধে পাওয়া যাবে কেন তার গেইম রিডিং এবিলিটি তার সমসাময়িকের থেকে অনেক বেশি তা জানার জন্য এই সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দেখলেই হবে। সে উমরাই কে ফুটবলে ভুল ধরিয়ে দিয়েছিল। আর তার খেলোয়াড়রা উলেরিখ, করিয়াসদের। আর এই সাফল্য সম্পর্কে জিদান বলেছে,
We have great players but there is a ton of work behind it.