রিয়াল বনাম লিভারপুল(প্রি ম্যাচ এনালাইসিস)
আজকে ফাইনাল। খেলাটা হবে এটাক বনাম এটাক। কেন এমন হবে? কার নটা সবাই জানে , লিভারপুলের ৪-৩-৩ ছাড়া কোন গতি নেই। এবং তারা এই ফরমেশনই খেলবে চেষ্টা করবে দুই উইং এক্সপ্লয়েট করবে। কিন্তু সমস্যা হল, জিদানের ফ্লেক্সিবিলিটি। এই ৪-৩-৩ এর বিপরীতে যে কোন ফরমেশন খেলতে পারে। জিদান অলরেডি এই ফরমেশনের কাউন্টার দিয়েছিল পিএসজিকে সেকেন্ড রাউন্ডে। কিন্তু সে সময় রিয়াল ছিল এগিয়ে। প্রথম লেগে রিয়াল নিজের মাঠে ওপেন গেইমই খেলেছিল এবং লাস্ট ১০ মিনিট ডেডলি কাউন্টার প্রেস। আবার জুভের মাঠে ব্যবহার করল গতবারের ফ্লোটিং ডায়মণ্ড। আর একে কাউন্টার দেওয়ার জন্য, পরের ম্যাচে রিয়ালের ডান প্রান্তকে ব্যবহার করেছিল এলেগ্রনি, কারণ কার্ভার হাইট কম মাদুজুকিচ হাইট ব্যবহার করতে পারবে। পরের ম্যাচে, বায়ার্নের সাথে প্রথম লেগে ব্যবহার করল ৪-১-৪-১। মার্সেলো পিচ হাই আপ করত।আর দুই উইংব্যাকের ফেলে আসা স্পেসে ছড়ি ঘুরিয়েছিল রিবেরী, কিমিচ। তাও পুরো ম্যাচে ডমিনেট করেও হেরে গেলে বায়ার্ন। সেকেন্ডে লেগে সেই বায়ার্ন রিয়ালের দূর্বল জায়গা ডান প্রান্ত দিয়েই আক্রমণ করে গেল। আর এই ম্যাচে মার্সেলোও পিচ কম হাই আপ করতে লাগল। জিদান পজিশনবিহীন প্লেয়ার দিয়েও ম্যাচটি জিতে আসল। জিদান সিদ্ধান্ত নে, প্রতিপক্ষ টিমের অবস্থতা ম্যাচের পরিস্থিতি, হোম খেলা নাকি এওয়ে সব কিছুর উপর ভিত্তি করে সে সিদ্ধান্ত নে কোন ফরমেশনে খেলাবে। তাই সম্ভাব্য ৪-৪-২ ডায়মন্ড হলেও এইটাই রাখবে বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে লিভারপুল জিদানের গুরু কার্লোর মিলানকেই ২০০৫ সালে হারিয়েছিল এবং সেইটা গতি দিয়েই ৯০ মিনিট প্রেসিং করে। কথা হল, তখনকার লিভারপুল আর এখনকার লিভারপুল। + অভিজ্ঞতা। রিয়ালের গত ২ বছরের উইনিং টিমের প্যাটার্ণটা কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং। যেমন, এটল্যাটিকোকে তারা ১৬-১৭তে হারানোর চেষ্টা ছিল কাউন্টার দিয়ে। কিন্তু সেই এটল্যাটিকোর বিপরীতে তারা খেলল পজেশনাল ফুটবল পরের বছর সেমিতে শুধু খেলল না জিতেও আসল বড় ব্যবধানে। আবার ফাইনালে জুভের সাথেও এই ফ্লোটিং ডায়মণ্ড দিয়ে জিতে আসল।তারমানে এইখানে এটল্যাটিকো, জুভে, ম্যানইউ যারা বল ছাড়া খেলতে পছন্দ করে তাদের জন্য রিয়াল পোজেশনাল ফুটবল বেছে নে এবং ডমিনেট করেই জিতে হিসেবটা ঘুরে গেল, এইবার যখন তারা বুঝে গেল রিয়ালের এই ট্রিক। সবাই বেছে নিল কাউন্টার এটাক অথবা হাই প্রেস। সহজ কথা, তাদের সাথে শুধু গতি দিয়েই খেলতে হবে। রিয়াল যে সব দলের সাথে এই সিজনে হেরেছে খেয়াল করলে দেখে যাবে সবাই রিয়ালকে খালি প্রেসের উপরই রেখেছে। আর এইজন্য জিদান তার রিয়ালকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালায়। জিদান এই সময় তার ট্যাকটেকিল ফ্লেক্সিবিলিটি গুলো দেখাতে শুরু করে বড় ম্যাচে যেইটা প্রতিপক্ষকে আনপ্রেডিকেটবল করে ফেলে। তাই, জিদানের সিস্টেমে আপনাকে ইন্ডিভিডিয়াল ফল্ট বের করতে হবে যেমনঃ আজকে ক্লপ চাইবে সালাহকে দিয়ে মার্সেলোর স্পেস এক্সপ্লোয়েট করতে আবার চাইবে জিদান যাতে কোন ভাবে D শেইপ করতে না পারে। হাই প্রেস করবে ক্রুসকে। এইখানেও সমস্যা, জ্রুসের পাসিং রেঞ্জ ভাল। আর রিয়াল একবার ফার্স্ট প্রেশার ব্রেক করতে পারলেই হল। গতবারের ফাইনালের মত রোনালদো গোল করে সেলিব্রেশন করার সময় একটা ডায়ালগ ছিল, “1 shot…BANG!!!!!” যদি ট্রাঞ্জিশন ঠিকমত হয় এইবারও বলবে। আবার কাউন্টার সামলাতে গেলেও সমস্যা। রিয়াল যে ভাবেই হোক, বল পজেশন D শেইপে রাখবে। আর দেখা গেছে, তারা যদি এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ৫-৭ বার রোটেড করতে পারে এমনি গোল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় কারণ প্রতিটা প্লেয়ার কখনো এক সাথে এতটা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। তাই জিদানের ফরমেশন যাই হোক না কেন এটাকিং এর সময় সে এই ফরমেশনেই চলে আসে। জিদান অলরেডি ম্যাচের পর ম্যাচ সে প্রুভ করেছে এইভাবে বল রোটেড করলে এমনি গোল হবে। বায়ার্নে সাথে হোম ম্যাচে প্রথম গোল খাওয়ার পর তারা মিনিট খানেক র জন্য একটু রেস্ট নিতে গেল। আর এর মধ্যেই রিয়াল ৫ বার বল রোটেড করে ঠিকই তাদের ফুলব্যাকের অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ বের করে আনল।এখন আপনি রিয়ালের জন্য প্লেয়ার কিনতে গেলে কিনবেন রোলের সাথে যে প্লেয়ার গুলো D শেইপে যাবে আর এই শেইপের কারণেই রণ এখন সেন্ট্রাল। ডি বক্সের ৬মি। ভিতর থাকলেই কাজ শেষ। তার হেডিং একুরেসি, অফ বল মুভমেন্ট আর ফুল ফোর্স এনার্জি তাকে এই জায়গা গুলোতে আলাদা সুবিধে দে।ড শেইপে দুই উইং এ থাকে দুই ফুলব্যাক হাফ স্পেস কভার করে দুই উইংগার মাঝে থাকে রন। পিছনে থাকে মদ্রিচ ক্রুস। গত সিজনে, ডীফেন্স করেছিল মাদ্রিদ মুলত ৩ সেন্ট্রারব্যাক দিয়ে, এর মধ্যে রামোস ছিল ফুলব্যাক তাই বল দেখলেই সামানে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ডিপে বসা যাওয়ায় দলগুলোর সাথে খেলা বিল্ড করার জন্য আমাদেরে এই ৩ সেন্টারব্যাক থেকে একজন উঠে এসে বল রোটেডে সাহায্য করতে চাইত। এইটা করত ক্যাসে। ক্যাসে বক্স ট বক্স মিড না তাই তার কাছ থেকে ওই রকম সার্ভিস পাওয়া গেল না। তবে সিস্টেমের খাতিরে এই সিজনে তার বক্স টু বক্স দক্ষতার নজরও পাওয়া গেল। জিদান এটাক করার জন্য একটা সিস্টেম পেয়ে গেল।D শেইপ মেইনটেইন করতে পারলে যে কোন দলের বিপক্ষে গোলের সুযোগ হবে আর লো ব্লকে থাকার জন্য কাউন্টারের সুযোগ কমে যাবে।
সমস্যা হল, অন্য জায়গায়।যখন দল গুলো ডিপে বসা শুরু করল। বার্সার বিপরীতে যেমন পজেশনাল খেললে দলগুলো ডিপে চলে যায় এমন।আর গতবার সবাই দেখেছে এই রকম ডিপে গেলে খেলাটা কন্ট্রোল হয় ক্রুস আর মদ্রিচদের দ্বারা। সাথে ক্যাসে আসলে, যেহেতু সে পোজেশনে ভাল না প্রতিপক্ষ চাই তাকে আউটনাম্বার করতে । আর আউটনাম্বার করার পরেই তারা পেয়ে যায় বিশাল স্পেস। যা কভার করতে হয় আমাদের ২ জন সেন্টারব্যাককে।আর এইজন্যি রিয়ালের বিপরীতে কাউন্টার এটাকিং দল গুলো ডেডলি ছিল। এই কারণেই মূলত এই বছর জিদান লীগ জিততে পারেনি। রনের অফ ফর্ম তাকে ভুগিয়েছে। D শেইপে প্লেয়ার ফোর্স করতে বাধ্য হয়েছে জিদান। এরমধ্যে টটেনহাম দেখিয়ে দিয়েছে সবাইকে কিভাবে রিয়ালকে হারাতে হয়। রিয়ালের উইক পয়েন্টে গতি ব্যবহার করে। কারণ পচ্চেতিনোও খুবই ফ্লেক্সিবল কোচ। সে দেখেছিল, রিয়ালের মেইন সমস্যা তাদের ফেলা আসা উইংব্যাকের স্পেস। বিশেষ করে মার্সেলো। তার এটাকিং এবিলিটির উপরই ভর করেই চলে টিম। টিমে অন্য কারো এত এটাকিং এট্রিবিউট নেই। আর সে জন্য মুলত নেইমারের ব্যাপারে রিয়ালের আগ্রহ। তাহলে আমাদের এটাকিং থ্রেড পাওয়া যাবে।আবার পচ্চেতিনোর এই দেখানো পথেই হাটে বাকিরা। জিদান প্রতি ম্যাচেই বিভিন্ন ফরমেশন দিয়ে দুই উইং ঠেকানোর চেষ্টা করে এবং প্রতিবারই কোন না কোন ভাবে সে জিতে আসে।তাই মোটামুটি বলা যায়, জিদান ওপেন গেইমে বিশ্বাসী।অথাৎ প্রতিপক্ষকে ক্লপ কিংবা পেপের মত খুনে মানসিকতা নেই। কিন্তু ম্যাচ জিতার জন্য যা করা দরকার আমি নিব।
এই জায়গায় রিয়ালের সমস্যা ছিল, বায়ার্ন জুভের ডিফেন্স । লিভারপুলের আবার সেইটা নেই। রিয়াল লিভারপুল দুই দলেরই ডিফেন্স ভাঙ্গা ছোড়া। তাই দুই দলই চিনতে করবে এটাক বনাম এটাক খেলতে। ৪-৩ কিংবা ৫-৬ গোল হলেও অবাক করার মত ব্যাপার হবে না। মজার ব্যাপার হল দুই দলই জানে তাদের কি করতে হবে। ক্লপ জানে রিয়ালের দূর্বলতা কোন জায়গায় আবার এইতাও জানে রিয়ালের হাতে এইটার সমাধানও আছে। পিএসজির বিপরীতে এই ফ্রন্ট ৩ এর জন্য জিদান কোভাকে দিয়ে ৪-৪-২ খেলায়। এবং এইটা রক সলিড হিসেবে প্রুভেনও হয়। কিন্তু এই ফরমেশনে রিয়াল ক্রিয়েটিভিটি হারিয়ে ফেলে। সহজ কথায়, ক্লপের এটাক করা ছাড়া কোন গতি নেই। প্রথমত ক্লপ গেগেইনপ্রেসিং করে, জিদান এইটা কাউন্টার করবেই। কথা হল, ক্লপ কি সময়ের সাথে খাপ খেয়ে নিবে নাকি প্লেয়াররা বিশ্বাস রেখে ৯০ মিনিটি প্রেস করে যেতে পারবে। ঠিক এই কাজটিই তারা করতে পেরেছিল ইস্তাম্বুলে। জিদান সরাসরি তার খেলোয়াড়ি জীবনের গেইম রিডিং এবিলিটিকে এইখানে কাজে লাগাচ্ছে। সরাসরি কোচদের তাদের দর্শনের পরীক্ষা নিচ্ছে। আর এই জন্য ক্লপ বলেছে,”We have an early agreement . I am responsible for the defeats.” এই টেস্টে জিদান বারবার উত্তরণ করছে তার খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। যেহেতু বাকী কোন কোচই খেলোয়াড় ছিল না, তাই তাদের পক্ষে হঠাৎ করে সিস্টেমের ফল্ট চোখে পরে না। লিভারপুল লো ব্লকে প্রেস করে না সাধারণত প্রেস করে ট্রানজিশনে। আবার আজকের ম্যাচে তাদেরকে যেভাবেই হোক লো ব্লকে প্রেস করতেই হবে। তাই কাউণতারের জন্য এনাফ স্পেস পাবে লিভারপুল। দেখার বিষয়, জিদান কি গতবারের ফাইনালের এপ্রোচ নে নাকি বেলকে দিয়ে এটাকের জবাব কাউন্টার এতাক দিয়ে দেয়। তার ফ্লেক্সবিলিটি তাকে যেমন সুযোগ ও দিয়েছে আবার কিছু সুযোগ কেড়ে নিয়েছে যেমন কোনটা সে ব্যবহার করবে? যে কোনটাতেই সমস্যা হতে পারে আবার কোনটাই নাও হতে পারে। মজার ব্যাপার হল, এই ক্লপের গেগেইনপ্রেসকে হারিয়েছিল হেইনকেইন্স, বায়ার্নের গতি অভিজ্ঞতা আর টেকনীক্যাল ফ্ল্যাক্সিবেলিটি দিয়ে। জিদানের হাতে সুযোগ আছে ক্লপকে আবার সে পুরোনো দিন মনে করিয়ে দেওয়ারও।লাস্ট মিনিটেই হেরে ছিল বুরুশিয়া। প্রেডিক্টবলের বিপরীতে আনপ্রেডিক্টবলের জন্যি এই ম্যাচটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।যদি হয় ট্যাকটিক্যালি সম্ভবত আরেকটি রিভুলেশন আমরা দেখতে চলেছি।
জিদানের ট্যাকটিস সম্পর্কে ক্লপকে ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাস করা হলে,
The two managers in the Champions League final have no clue about tactics? What would that say about the game? Unfortunately, I have to accept that he is as brilliant as he was as a player.
It is organized when it needs to be organized, and chaos when it needs to be chaos.
আমাদের সিস্টেম সম্পর্কে ক্লপ। Group of Hunter.
আর জিদানকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে,”There are two teams, and you have to understand how your opponent can hurt you, and you have to control how they do this. “When you have the ball, with your game, you have to try and hurt your opponent.”- He revelead his techinal philosophy. The same word came from a wc winner Lippi.