লোপেতেগুই ট্যাকটিক্যাল এনালাইসিস
জিদান এবং রন পরবর্তী যুগে মাদ্রিদের নতুন করে পথ চলা শুরু হয়েছে লোপেতেগুই এর হাত ধরে। এবং আসতে না আসতেই কোচ আসলে বুঝে গেছে রিয়ালের প্লেইসটা কেমন। কেনই বা অন্যান্য বড় বড় কোচরা এইখানে আসতে চায় নি। রিয়াল হল এমন একটা জায়গা যেখানে সমর্থকরা কখনো দেখবে না আপনি কতটা সময় পেয়েছেন একটা দল বিল্ড করতে । এইখানে সবাই শুধু সাকসেস চাই। শুধু চাই জিততে। অন্যান্য ক্লাব থেকে রিয়ালের এই শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারন কিন্তু এইটি। এইখানে সবাই এত প্রেশারে থাকে যেইটা আসলে বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। এইখানে জিতার পাশাপাশি খেলার স্টাইল নিয়ে ও মানুষ তির্যক বাক্য করবে। জিদান আমলে খুবই ফেমাস ডায়ালগ ছিল, জিদান তো শুধু ক্রস ক্রস খেলে। ইভেন দুই সিজন চলে যাওয়ার পরেও সবার মনে প্রশ্ন ছিল, জিদান কি আদৌ কোন ট্যাকটেশিয়ান? শুধু ভাল স্কোয়াডের জোরেই এতটুকু এসেছে। যদিও টানা ৩ বার উচল জিতে এই বক্র কথাগুলোর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল জিদান। সাথে সাথে এইটাও নিশ্চিত করে গিয়েছিল এর বেশি কন্টিনিউ করলে আজকে যারা তার প্রশংসা করছে তারাই তাকে এক রকম তুলোধ্বনি করে বের করে দিবে। তাই রন কিংবা জিদান দুই জনেরই লক্ষ্য ছিল সম্মান নিয়ে সময় থাকতে চলে যাওয়া। যতই আমরা রোনালদো প্রেমী হই না কেন এইটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ৫-৬ ম্যাচ রন গোল না পেলে আজকে যারা তাকে সিংহাসনে বসিয়েছি তারাই “গেল গেল” রব তুলবে। মাদ্রিদে এইটা নতুন কিছু নয়। প্রতি সিজনে এমন হয়। আর এই প্রেশার কুকারের ভয়ে কোন স্বনামধন্য কোচই এইখানে আসতে চায় নি।কারণ তারা জানত, ৩টা উচল জিতার পর এই দলের সমর্থকরা আরো গ্রীডি হয়ে যাবে। একটা ম্যাচ বাজে খেললে তারা আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আর এমন পরিস্থিতিতে মুলত লোপেতেগুই চ্যালেঞ্জটি নেয়। এই রকম সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য আমার পক্ষ থেকে অবশ্যি তার একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য।
এখন আসি তার ট্যাকটিস নিয়ে। গত ম্যাচ এটল্যাটিকোর কাছে হারার পর তাকে মিডিয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় একরকম ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সবাই যেইটা ভুলে যাচ্ছে এইটাই ছিল তার প্রথম ম্যাচ এবং ক্যারিয়ারে সর্বপ্রথম কোন ফাইনাল। ভুল করাটা এইখানে যৌক্তিক। বরং আমাদের দেখা উচিত, ভুল গুলো আদৌ মিনিমাইজ করা সম্ভব ছিল কিনা।
ফাইনাল নিয়ে আলোচনা করার আগে প্রথমে আমরা দেখে আসি লোপেতেগুই এর প্লেয়িং স্টাইল সম্পর্কে। আমি প্রতিটা পজিশনে ডিটেইলস বর্ণনা করার চেষ্টা করব। তারপর দেখার চেষ্টা করা হবে আদৌ তার দর্শনের কতটুকু মাদ্রিদের প্লেয়াররা নিতে সক্ষম হয়েছে।
এইটা মোটামুটি সবাই এখন জানে যে, লোপেতেগুই পজেশনাল বেসড ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। আর এই পজেশনটা সে ধরে রাখতে চাই । প্লেয়াররা নিজেদের মধ্যে পজিশন ইন্টারচেঞ্জ করে। আইডিয়াটা নেওয়া হয়েছে পুসকাসদের দ্যা গ্রেট হাংরী দল থেকে। এর অর্থ হল, দলের ১১ জন প্লেয়ারেই স্পেস এবং সময় সম্পর্কে তুখোড় দক্ষ হওয়া লাগবে। যেহেতু তার দল পজেশন হোলদ করতে চায় তাই তার দলে এমন একজন গোলকিপার দরকার যে কিনা পায়ে খেলতে পারে। দূর্ভাগ্যবশত, মাদ্রিদের স্কোয়াডে বর্তমানে লুনিন বাদে এমন কেউ নেই যে কিনা পায়ে দক্ষ। এখন পায়ে দক্ষ হওয়াটা কেন জরুরী? শেষ ম্যাচ দেখলেই উত্তরটা পেয়ে যাওয়া কথা। আপনাকে যখন হাই প্রেস করা হবে তখন আপনার শেষ ভরসা হচ্ছে গোলকিপার। গোলকিপার খুব সহজে তখন মাঠ স্ক্যান করে একটা সঠিক পাসেই ফার্স্ট প্রেশার ব্রেক করতে সক্ষম । একটা সুউপিং গোলকিপার কতটা জরুরী সেইটা নয়ার, এডারসনদের দেখলে বুঝা যায়। এই সিজনে লিভারপুলে এলিনসনের খেলা দেখলেও বুঝতে পারবেন সে পায়ে কতটা দক্ষ। এখন পজেশন হোল্ড করা অবস্থায় আপনার গোল্কিপার যদি পাস না দিয়ে সুইপিং করতে চায় এইটা লোপেতেগুই ট্যাকটিস এর সব থেকে ভয়ংকর ব্যাপার হবে কারণ তার আম্নে হল, বল কখনো ব্যাক থেকে ফ্রন্টে আসবে না। যেইটা মূলত হয়েছে শেষ ম্যাচ। সেকেন্ড হাফে এটল্যাটিকোর হাই প্রেসিং এর সামনে দাঁড়াতেই পাচ্ছিল না মাদ্রিদ। অথচ ব্যাপার হওয়ার কথা ছিল উলটো।
এইবার আসি ডিফেন্সে। গোলকিপারের মত দুইটা সিবিরই বল পায়ে সমান দক্ষতা থাকতে হবে। ওয়ান টাচ ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বল প্লেয়িং সিবি হিসেবে রামোসের সেই অভিজ্ঞতা থাকলে ভারানের জন্য কাজটা একটু কঠিন। শেষ ম্যাচে গোল কাহোয়ার সময় দেখা গিয়েছে এক টাচের জায়গায় সে ডাবল টাচ করতে গিয়েছে বল আর তাতেই বল ইন্টারসেপ্ট করে গোল দিতে সক্ষম হয়েছে এটল্যাটিকো। পাস হবে ভার্টিকাল। অনেকটা পেপ এর স্টাইল আসে এইখানে। এইছাড়া ও সেন্ট্রাল দিফেন্ডারদের ও স্পেস খুজতে হবে যেইটা মুলত জিদানের সময় ছিল না। সব সময় সিসবি দের স্পেস খুজা লাগবে নিজেকে পাসিং অপশন ক্রিয়েট করার জন্য। পাশাপাশি যেহেতু হাই ম্যান ডিফেন্স পছন্দ সেহেতু প্রায় সময় ১ বনাম ১ সিচুয়েশনে পড়বে ডিফেন্ডাররা । ডিল করতে হবে সেগুলাও। শেষ ম্যাচে প্রথম গোলটা এমন সিচুয়েশনে এসেছিল যেখানে ভারানে এবং রামোস দুইজনেই ছিল সম্পুর্ন রকমের অলস আর খামখেয়ালি। এই সিস্টেমে একবার মনোযোগ হারালে হয়ে যেতে পারে ভয়ংকর কিছু।
দুই ফুলব্যাকের কাজটা জিদান এর সময় যেমন ছিল এখনো একই থাকবে। তবে এখন ট্র্যাকব্যাক করতে হবে মার্সেলোকে । আগের মত ওয়াইল্ডলি এটাক করাটা বোকামী হবে। দুই ফুলব্যাকেই পিচ হাই আপ করবে এবং যার যার ওয়াইড এরিয়া কভার দিবে।
লোপেতেগুই সিস্টেমের সব থেকে গুরুত্বপুর্ণ অংশ হল মিড। লোপেতেগুই মিডফিল্ডারদের অবশ্যি টেকনিক্যাল এবং টেকটিক্যাল দুই জায়গাতেই ভাল হওয়া লাগবে। তাদের বুঝতে হবে স্পেস কঠায়। পাসিং কম্বিনেশন সম্পর্কে ক্লিয়া ধারনা থাকা লাগবে। এবং সম্ভাব্য বেস্ট পজিশন গুল দখল করে কাউন্টার প্রেসের জন্য বাকীদের রেডি থাকতে হবে। তাছাড়া, লোপেতেগুই মিডলে খেলতে পছন্দ করে এর অর্থ হল, মার্সেলো থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ন এইবার ক্রুস, ইস্কো এবং মদ্রিচের পারফরম্যান্স। শেষ ম্যাচে আমরা দেখেছে মাঝে মাঝে মার্সেলোকে সেন্টার রোলে এসে প্লে করতে এইটা মূলত এই কারনেই আসা। যদিও আমি চাই না সে সেন্টারে আসুক। আমাদের হাতে আরো ভাল অপশন আছে সেন্টার থেকে প্লে করার জন্য। তো এই মিডে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এইখানে ক্যাসে কই? হা এইটাই হল ট্রিকি পার্ট। ক্যাসে এই সিস্টেমের জন্য একদমই পারফেক্ট না। কিন্তু তার ডিফেন্সিভ স্কিল এতই বেশি যে তার এটাকিং স্কিল না থাকলেও লোপেতেগুই এর কোন সমস্যা হবে না বরং তাকে কেন্দ্র করে সবাই নিশ্চিন্তে আক্রমণে যেতে পারবে। আমি আগেও অনেক জায়গায় বলেছি, ক্যাসে একাই দুইটা সিবির সমান কাজ করে প্রতিটা ম্যাচে। তাহলে চিন্তা করুন আপনি কি এমন কাউকে বাদ দিবেন যে কিনা আপনার ডিফেন্সে সলিড স্টাবিলিটি দিবে?
এখন আসি ফ্রন্ট লাইনে। এইতা নিয়ে সবার মাথা ব্যাথ্যা। যদিও এইতা নিয়ে আমি মাথা ব্যাথ্যার কোন কারণও দেখছি না। লোপেতেগুই সিস্টেমে উইংগার একচুয়েলি সেন্টার রোলে এসে যায় । কেউ একচুয়েলি উইংগার তাহকে না। দুইটা উইংগারই বেসিক্যালি নাম্বার ৯ এর পজিশনতা দখল করবে আর নাম্বার ৯ দুই উইং এর স্পেস নিবে।
এর অর্থ হল বেঞ্জু এখনো স্পেস ক্রিয়েট করবে এসেনসিও বেল দের জন্য। এই দিকে মজার ব্যাপার হল, রিয়ালে একমাত্র এসেনসিও সেন্টার রোল পছন্দ করে বেল ওয়াইড এরিয়া কভার দিতে বেশি ইন্টারেস্ট থাকে। আর যেহেতু কোন ফিক্স স্টাইকার নেই তার মানে নিশ্চিন্তে এইখানে ফলস ৯ ট্যাকটিস খেলবে কোচ। এইদিকে বলে রাখা ভাল যে, কেন আমাদের কোন টার্গেট ম্যান দরকার নেই। প্রথমত টার্গেট ম্যান কখনো তার স্পেস শেয়ার করবে না অন্যান্য টিমের সাথে। আর আমাদের পুরো দলেরই যখন পজিশন সারাক্ষন ইন্টারচেঞ্জ করতে হয়। একটা প্লেয়ার পজিশন ফিক্সড হয়ে গেলেই সমস্যা তারমানে দলের অন্যান্যরা আর গোল মুখে শট নিতে পারবে না। পাশাপাশি আমাদের কাউন্টার প্রেসিংটাও দূর্বল হয়ে পড়বে যেইটা আসলে লোপ্তেগুই এর গোপন অস্ত্র। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, কোন ভাবে টার্গেট ম্যান নিয়ে খেলা যাবে না। আর যতদূর বুঝলাম কোচ কিংবা রিয়াল কারোই আগ্রহ নেই। এই ব্যাপার নিয়ে কোচ থেকে ম্যানেজমেন্ট সবাই মোটামুটি ক্লিয়ার।
এখন রোনলদো এই পজিশন থেকে মৌসুম্প্রতি ৪০+ গোল দিত সেইটা আমরা কিভাবে কভার দিব? প্রথমত বলে রাখি প্লেয়ারটার নাম রোনালদো। ভুলেও তাকে কাউকে দিয়ে অন্য গোল স্কোরার দিয়ে রিপ্লেস করানোর কথা ভাবলে চলবে না। রোনালদ শুধু গোলই করত না । টিম লিড দিত। বিল্ড ও করত মাঝে মাঝে। তাই রনের এট্রিবিউট গুলো জীবনেও অন্যান্য কোন স্কোরার থেকে পাওয়া যাবে না এবং পাওয়ার চেষ্টা করাটা খড়ের গাদাইয় সুচ খুজার মত অবস্থা। আমরা যেইটা করতে পারি সেইতা হল মিনিমাইজ। আর হিসাব করি কিভাবে মিনিমাইজ করা যেতে পারে। যদি আমরা ফিক্সড স্টাইকার নিয়ে খেলি সেক্ষেত্রে ওই স্টাইকার আমাকে ৩০+ গোল এনে দিল কিন্তু সে জায়গায় বাকিরা কতটা গোল করতে পারবে? প্রশ্নটা থেকে যায় কারণ টার্গেট ম্যান কখনো তার সেন্টার রোল শেয়ার করবে না। অন্যদিকে, যদি আমরা ফলস ৯ ট্যাকটিসে খেলি । গোলের জন্য আমাদের একক কোন প্লেয়ারের উপর নির্ভর হওয়া লাগবে না। দলের সবাই ইকুয়েলি কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ পাবে। সবারই সুযোগ থাকবে টপ স্কোরার হওয়ার। নাও এই ট্যাকটিস আমাদেরকে উচলে ভুগাবে এইটা নিশ্চিত। কারণ উচলে একজন ম্যাচ উইনার লাগবে । ফ্রন্ট থেকে নেতৃত্ব দিতে হয় কাউকে। তবে এই ট্যাকটিস নিশ্চিন্তে লীগ মায়চ গুলতে খাটানো যায়। লিগার বেশিরভাগ দলের কাছে এই ট্যাকটিসের কোন উত্তর নেই। আপনি প্রায় সময় দেখবেন আমাদের পুরো সেন্টার খালি । কারণ সবাই বক্সের বাইরে অবস্থান করছে। লপেতেগুই প্রতিপক্ষের উপর প্রেশার সৃষ্টি করে তাদের নার্ভাস করে দিয়ে গোল আদায় করতে পছন্দ করে।জিদানের আমলে আপনারা যে সাইড বাই সাইড পাস দেখতে অভ্যস্ত সেইটা এখন পরিবর্তিত হবে। এখন খেলা হবে অনেক সেন্ট্রালি।
শেষ ম্যাচে ইস্কোকে মিডে দিয়ে শুরু করলেও সিজনের মাঝামাঝিতেই দেখবেন ইক্সকে আবার উইঙ্গার অথবা স্টাইকারে নিয়ে আসবে লোপ্তেগুই। সেক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাব্য দুইটা ফ্রন্ট লাইন হতে পারে এই রকম। বেল, বেনজেমা, ইস্কো/ এসেনসিও, ইস্কো,বেল। আরে এইটা সম্পর্কে আমাদের কোচ আমাদেরকে একটা আইডিয়াও দিয়ে দিয়েছে, “The best of isco is yet to come.” এর অর্থ দল একটু খারাপ করলেই ইস্কোকে মেইনম্যান করা হবে।
এই দিকে সবার একটা ভুল ধারনা আছে লোপেতেগুই এর আমলে আমরা হয়ত কাউন্টার দেখব না । মজার ব্যাপার হল, লোপেতেগুই কাউণ্টার এটাকিং স্টাইলের ও ভক্ত।কাউন্টার এটাক সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাস করা হলে তার উত্তর ছিল, “THERE ARE TIMES WHEN IT IS IMPOSSIBLE TO COUNTER AND TIMES IN WHICH IT IS A FANTASTIC SOLUTION.” অর্থ হল কিছু কিছু সময় কাউন্টার করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ আবার অন্য সময় এইটা সব থেকে বেস্ট সলিউশন। আর এইজন্য তার দুইটা বেশি ব্যবহৃত ফরমেশন হল ৪-৩-৩ এবং ৪-২-৩-১ একটা পজেশন বেসড অন্যটি কাউন্টার বেসড। যাদের এইটা নিয়ে মিথ্যা ধারণা আছে আমার মনে হয় এর পর আর থাকবে না।
এইবার আসি লোপেতেগুই এর মুল শক্তিগু্লোর দিকে । হাই প্রেসিং আর কাউন্টার প্রেসিং। লোপেতেগুই ম্যান ওরিয়েন্ডেড হাই প্রেসিং করতে পছন্দ করে। স্টাইকার গোলকিপারকে সাইড পাস করে আর বাকিরা সেন্ট্রাল এরিয়ায় পাসিং অপশন বন্ধ করে দেয়। গোলকিপারের হাতে অপশন থাকে শুধু সাইডে পাস দেওয়ার । আর সাইডে পাস দিয়ে দিলেই উইঙ্গার অথবা ফুলব্যাক গিয়ে প্রেস করা শুরু করে অন্যদিকে স্টাইকার গোলকিপারকে ব্লক করে দেয় ফলে রিস্ক ফ্রী খেলতে গেলে বল সামনে বাড়াতেই হবে অথবা এইখানে পাসিং কম্বিনেহসন খেলতে হবে যেইতা খুবই কঠিন কাজ কারণ এই পজিশনে নিউম্যারিক্যাল সুপিওরিটি পাই লোপেতেগুইএর দল। তাদের সব সময় অতিরিক্ত ম্যান থেকে যায় মার্ক করার জন্য।
আগেই বলেছি লোপেতেগুই এর দল নিজেদের মধ্যে শট পাসিং কম্বিনেশন খেলতে পছন্দ করে । এতে যা হয় ছোট স্পেসে সবসময় নিউম্যারিক্যাল সুপিরিওটি পায় তার দল। আর এই সময় বল হারালেও তখন খুব সহজে কাউন্টার প্রেস করে বল জিততে পারে তারা। অনেকটা ক্লপের গেগেইনপ্রেসিং এর মত।
ডিফেন্সিভলি কোচ ৪-১-৪-১ এই স্বাছন্দ্যবোধ করে পাশাপাশি মাঝে মাঝে ৪-৪-২ খেলতেও দেখা যায়। আমি এই ব্যাপারে আর বিস্তারিত গেলাম না। লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে :p
এইবার আসি, আমাদের শেষ ম্যাচ নিয়ে এটাল্যাটিকোর বিপক্ষে। মোটামুটি সবার একতা ধারনা হয়ে গিয়েছে কি ধরণের গেইম প্ল্যান করে থাকে আমাদের কোচ। তো সেই সাপেক্ষে তুলে ধরি আমাদের দলের সবাই আসলে এই ট্যাকটিসকে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে কিনা।
যে ৪টা গোল আমরা খেয়েছি মজার ব্যাপার হল, সবগুলাই ছিল কনসানট্রেশন ইস্যু। প্রথম গোলে রামোস, ভারানে দুইজনেই রিলাক্স করছিল। দ্বিতীয় গোল মার্সেলো ভুতুড়ের মত ডেড বল উইন করতে চাইল । এইটাই প্রমাণ করে সে আসলে এই ট্যাকটিস থেকে অনেক দূরে আছে। হয়তবা কোচ বলেছিল ট্রেইনিং, আমাদের যে কোন মূল্যে হোক বল পজেশন ধরে রাখতে হবে । আর এইটাকেই লিটারেলি ধরে নিয়ে সে ডেড বলের পজেশন উইন করতে চাইল তাও আবার কখন? ঠিক ক্যাসে সাবস্টিউট হওয়ার পর। যেখানে তার একটু মাথা খাটানো দরকার ছিল তার ফেলে আসা স্পেস কভার দিবার মত কেউ নেই এখন । মার্সেলো পজিশন হারানোর পর পরই ওই প্রান্তে বিশাল স্পেস সৃষ্টি হয়। গোলটা আসবে স্বাভাবিক। তৃতীয় গোলে ভারানের স্পিডকে প্রথমবারের মত আমি ড্রপ হতে দেখেছি। খুব সম্ভবত বিশ্বকাপের ক্লান্তি এখনো তাকে ছেয়ে রেখেছে। ভারানে পুরো ম্যাচেই তার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক স্লো ছিল। তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছিল সে তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করে হোটেল গিয়ে ঘুমাতে চায়। তার ফিটনেস ইস্যু নিয়ে কোচের লক্ষ্য রাখা উচিত। তবে তারপরেও সে মোটামুটি কভার দিয়েছিল। ভুলটা করল রামোস। রামোসে স্পেন দলে পিকের সাথে খেলত অভ্যস্ত। ভারানের সাথে সে পিকেকে গুলিয়ে ফেলল। সে ভেবেছিল ভারানে ওয়ান টাচ ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত। কিন্তু সত্য হল তা না। কোন প্রেশার ছাড়া রামসের ভারানেকে পাস দেওয়াটা উচিত হয়নি। এইখানে মূল কাজটা করা উচিত ছিল আবার ব্যাক পাস দেওয়া। তারপর সবাই পজিশন হোল্ড করলে খেলা স্টার্ট করা। কিন্তু ওই যে বললাম নাভাস বল পায়ে ভাল না তাই লীডার সামনে থেকে লিড দিতে গিয়েছে । এইবার আসি মিডে । খেলার প্রথম মিনিট থেকেই এক প্রকার উগ্র ক্রুসকে দেখা গেল। প্রশ্ন জাগতে পারে কেন? উত্তর হল ক্যাসে। আগেই বলেছি লোপেতেগুই সিস্টেমে এই পজিশনে এমন কাউকে দরকার যে বল প্লে করতে পারে। দেখার বিষয় লোপেতেগুই ক্যাসে কে কিভাবে ব্যাহার করে সিজনের পরবর্তী সময় গুলোতে।প্রথম হাফে ক্যাসে দুইটা বল দিয়েছিল ডিফেন্সিভ থার্ডে । যেখান থেকে অন্য যে কোন সময় হলে গোল ও হতে পারত । আবার এই ক্যাসেই দুইটা অসাধারণ ট্যাকল করে কাউণতার এটাক শুরু করে। তাই বলা যায় তার কন্ট্রিবিউশনটা মিশ্র। সমস্যা টা শুরু হয় সেকেন্ড হাফ থেকে মুলত সেকেন্ড গোল হইয়ে যাওয়ার পর। এটল্যাটিকো পজেশন ডমিনেট করা শুরু করে। নাভাস, আর ক্যাসে দুইতা উইক লিংককে তারা টার্গেট করে কোন ভাবে তখন ক্রুসের কাছে আর বল আসছিল না। ক্রুস ও ফ্রাসট্রেট হয়ে যাচ্ছিল । এক পর্যায়ে ৬৫% এর উপর বল পজেশন হোল্ড করতে থাকে এটল্যাটিকো।
সেকেন্ড গোল দেওয়ার পর আর খাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত খুব সম্ভবত ডিফেন্স থেকে আর বলই বের করতে পারছিল না মাদ্রিদ। গোল খাওয়াটা মাদ্রিদের জন্য তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তারা এতটাই অসহায় অবস্থায় ছিল এটল্যাটিকোর হাই প্রেসে। মিডের সাথে পুরোপুড়ি ডিসকানেক্ট হয়ে যায় বেঞ্জু,বেল। মাঝে মাঝে বেঞ্জু মিডে এসে চেষ্টা করলে ও খুব সহজে তার বিরুদ্ধে ১ বনাম ৩ সিচুয়েশন হয়ে যাচ্ছিল।মাদ্রিদের মিডের বিপরীতে ডমিনেট করছিল তখন এটল্যাটিকোর মাদ্রিদ। মদ্রিচ তো বলই পাচ্ছিল না। সিস্টেমের আগা মাথা সেকিছুই সমভবত ধরতে পাচ্ছিল না। এমন অবস্থায়, কোচকে রিস্ক নিতেই হত। অনেকে বলতে পারেন গোল খাওয়ার পরে নিলে হত। বাট কোচ রিস্ক নিয়েছিল যাতে গোল না খাই বল পজেশন ধরা রাখা যায়। মূলত সেই প্ল্যান থেকেই সেবায়েসকে নামানো। কিন্তু নামানোর কিছুক্ষন পরেই গোল খেয়ে বসে মাদ্রিদ। এর পর মাদ্রিদের ডিফেন্সের উপর আরো চড়াও হয় এটল্যাটিকো। তারা বুঝতে পারে, মিড ওপেন হলে মাদ্রিদ গোল পাবেই। প্রথম হাফে আমরা দেখেছি। মার্সেলো, বেলরা কি পরিমাণ ভয়ানক যদি উপরে উঠার সুযোগ পায়। এই জন্য মুলত তাদেরকে আর কন্ট্রোলই নিতে দেয় নি এটল্যাতিকো। দিনশেষে সবাই যে বলে, টিকি টাকা খেলে হেরেছি। স্ট্যাট তা বলে না। আমাদের পজেশন ছিল মাত্র ৫৯%। পাসের সংখ্যা ও আহামরি না । কী পাস যা দেওয়া হয়েছে সব প্রথম হাফে। সেকেন্ড হাফে মূলত এটল্যাটিকোর কাছে মাদ্রিদ পাত্তাই পায়নি। এর কারণ অনেকভাবে ব্যখ্যা করা যায়। আপনি কিভাবে দেখছেন সেইটা শুধু আপনার উপরই নির্ভর করছে।
আমার কাছে ব্যাপারটা হল, প্লেয়ারগুলো এখনো সিস্টেমে অভ্যস্ত না । প্রমাণ? খেলা যেখানে আমি বলেছি আগেই লোপেতেগুই সেন্ট্রালি খেলতে পছন্দ করে। শেষ ম্যাচে সব থেকে কম এটাক হয়েছে সেন্ট্রার দিয়েই । অবশ্য এর জন্য সিমিওনের ও একতা প্ল্যান ছিল।পোস্টের সাইজের কথা ভেবে ওই দিকে আর গেলাম না। আমাদের মূল সমস্যাটা ডিফেন্স লাইনে । সম্ভবত তারা কোচের অধীনে এইটা সেকেন্ড ম্যাচ খেলেছে। কেমিস্ট্রি গড় তুলতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে। ক্রুস কিংবা মার্সেলোর কাছে কাউন্টার প্রেসিং এর আইডিয়াটা খুব একটা ক্লিয়ার না। যত বারই মার্সেলো কাউন্টার প্রেস করেছে ততবারই ভুল করেছে। আর সেজন্য মূলত লোপেতেগুই স্প্যানিশ পেলায়র পছন্দের। এই কাজগুলো স্প্যানিশ প্লেয়াররা খুব ভালভাবে করতে পারে।
সব শেষে বলা যায়, মাদ্রিদের ফ্রন্ট লাইনে এখনো কোন সমস্যা নেই। লোপেতেগুই প্রতি ম্যাচেই গোল পেয়েছে। প্রতি ম্যাচেই কোন না কোন ডিফারেন্ট স্কোরার আছে । যেইটা তার ট্যাকটিসের অংশ। সমস্যটা মুলত ডিফেন্সে এবং গোলকিপিং এ।লুনিন কে কেনা হয়েছে ভবিষ্যতে যাতে পজেশনাল বেসড সিস্টেম আমরা ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি। মাদ্রিদের ম্যানেজমেন্টের ভবিষ্যত প্ল্যানিং ক্লিয়ার। তারা রন পরবর্তী যুগের কথা ভেবে রেখেছে বলেই মনে হচ্ছে। জানি না, আমাদের নতুন কোচ কেমন করবে ভবিষ্যতে। তবে সিস্টেমের আধ্যপাদ্যন্ত ধরতে পারলে সাফল্য অবধারিত। পোর্ত্তে তার ফল করার কারণ ছিল, ওই জায়গায় প্লেয়াররা ডিফেন্সিভ মেন্টালিটির+ কেউ স্পেস খুজে পেত না। বাট কয়েক মাস কাজ করার পর এরা এতটাই বিস্ট হয়ে গিয়েছিল যে, উচলে পেপের বায়ার্নকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল। জিদান ও এটল্যাটিকোর সাথে তার প্রথম ম্যাচ হেরেছিল। এর পরেই মূলত ঘুরে দাঁড়ায়। কোন দলই অজেয় নয়। হারটাকে ও মেনে নিতে শিখাটাও মাদ্রিদজমের মধ্যে পরে। কাউকে ব্লেইম করার কিছুই নেই এইখানে। শুধু প্লেয়ারদের উপর প্রেশার সৃষ্টি না করি। এরা আমাদেরই প্লেয়ার। সুখী হোক জগতের সকল প্রানী :D