তিতের ইফেক্টিভ ওয়েতে "জোগো বনিতো"
২০১৪ বিশ্বকাপ প্রতিটি ব্রাজিলিয়ানদের জন্যি হতাশাজনক রাত ছিল। সেমি ফাইনালে ৭-১ গোলে হারার কারনে নই বরঞ্চ সেই ম্যাচে জার্মানী হাতে কলমে ব্রাজিলকে শিখিয়ে দেয় তারা আধুনিক ফুটবল থেকে কতটা দূরে রয়েছে। ট্রানজিশন পিরিয়ডে জার্মানীর হাই প্রেসের সামনে ম্যাচের ২০-২৩ মিনিটের মধ্যেই ৪ গোল দিয়ে বসে। দেখার বিষয়, এই বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিল প্রস্তুত কিনা।
দুঙ্গার অধীনে যে ব্রাজিলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে ব্রাজিল দলই এইবারের বিশ্বকাপে অন্যতম একজন ফেভারিট হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মেইন একাদশ না একাদশের বাইরে ও এমন অনেক খেলোয়াড় আছে যারা নেমেই যে কোন সময় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। তাই, তিতেকে জানতে হবে তার হাতে থাকা রিসোর্সগুলোকে কিভাবে সময়মত ব্যবহার করতে হবে। তিতের অধীনে ব্রাজিল দলের ডিফেন্সটি আগে থেকে আরো শক্তিশালী হয়েছে। আমি প্রথমে ব্রাজিলের এটাকিং আর ডিফেন্স নিয়ে কথা বলব। এর কারণ হল, ব্রাজিলের মিড নিয়ে তিতে অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়েছে। আর এইটাও মোটামুটি নিশ্চিত যে, তিতে দল ভেদে বিভিন্ন মিড আর শেইপ নিয়ে আরো পরীক্ষা নীরিক্ষা চালাবে।
ব্রাজিলের স্কোয়াডে থাকা প্লেয়ারদের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের সবার আলাদা আলাদা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কথা হল, ব্রাজিল দলটা তখন সেরা হবে যখন, খেলোয়াড়গুলোকে তাদের ফ্রীডম দিয়ে খেলানো যাবে। প্রথমেই এটাকিং প্রান্ত দেখি। দুইটা জায়গা এইখানে ফিক্সড। চেলসির উলিয়ান আর পিএসজির নেইমার। চেলসির উইলিয়ানকে নিয়ে এইখানে যুক্তিযুক্ত। কারণ, তার লং রেঞ্জ এবিলিটি আবার উইলিয়ান পিচ ওয়াইড করতে সাহায্য করে । তাছাড়া, তার দলভুক্তি, ডান প্রান্তে ব্রাজিলকে ডিফেন্সিভ স্টাবিলিটিও দিবে। মজার ব্যপার হল, উইলিয়ান নেইমার দুইজনেই ওয়াইড উইংগার হলেও দুইজনের খেলার ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন।উইলিয়ান যেমন পিচ বড় করতে সাহায্য করে। নেইমারের রোল সেখানে ভিন্ন। নেইমার পছন্দ করে সেন্ট্রারে থেকে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে। নেইমার যেই কাজটা করে মূলত ওয়াইড এরিয়া থেকে চেষ্টা করে বল নিয়ে যতটা সম্ভব সেন্ট্রালী ঢুকতে।আর সেজন্য সে ডায়াগোনাল রান দে। এতে যা হয় সে ডিফেন্ডারদের খুব সহজে এট্রাক্ট করে। দলের অন্যান্য সদস্যরা তখন আশে পাশে প্রচুর ফ্রী সময় এবং স্পেস পেয়ে যায়। তাছাড়া ১ বনাম ১ সিচুয়েশনে ড্রিবিলিং সাকসেস রেট কিন্তু সব থেকে বেশি এই নেইমারেই।তাই তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। তবে বলে রাখা ভাল, বল হারানোর তালিকায়ও তার নাম আছে। সন্দেহ নেই ব্রাজিলের সাফল্য অধিকাংশ নির্ভর করছে নেইমারের উপর।
এখন দেখা যাক, ফরোয়াড় লাইন কিভাবে সাজালে সব থেকে বেশি উপকৃত হবে নেইমার । ফরোয়ার্ড লাইনে আমাদের দুইটি প্লেয়ার হল জেসুস, ফিরমিনো। জেসুস হল ট্র্যাডীশনাল নাম্বার ৯ বলতে আমরা যা বুঝি। জেসুস মূলত প্রেশার সৃষ্টি করে ডিফেন্স লাইনের উপর। তার খেলার ধরণকে বলা যায়, “fox in the box”. সে নিজেকে পুরোপুরি টার্গেট ম্যান হিসেবে রাখে। নেইমার কিংবা কৌতি আসলে সে সামনে এগিয়ে আসে ওয়ান টু ওয়ান খেলার জন্য আর এতে ওয়াইড প্লেয়ার কাট ইন্সাইড করে ঢুকতে পারে।এর ফলে যে সুবিধে হয়, নেইমার জেসুসের সাথে ওয়ান টু ওয়ান খেলে খুব সহজে বল নিয়ে সেন্ট্রালী ঢুকতে পারে।অথবা, চাইলে ওয়াইডে গিয়েও খেলতে পারে। এছাড়া জেসুসের ডিফেন্ডার পিছন থেকে দৌড় দেওয়ার প্রবনতাও আছে। ড্রিবলিং, স্কিল, বল পোজেস করার ক্ষমতাও জেসুসের অসাধারণ।ব্রাজিলের যে ট্র্যাডিশনাল নাম্বার ৯ রোনালদো, রোমারিও কথা বলে থাকি সে ট্র্যাডিশনাল নাম্বার ৯ হোয়ার সামর্থ্য আছে জেসুসের। এই মঞ্চটাই নিজেকে চেনানোর। তাই বিশ্বকাপের “গোল্ডেন বয়” হয়ে গেলে অবাক করার মত ব্যাপার হবে না। অন্যদিকে, ফিরমিনোর খেলার ধরণ হল পুরোপুরি ভিন্ন। ফিরমিনো লিভারপুলে সেন্টার স্টাইকার হিসেবে খেললেও আমরা জানি ক্লপ ফিরমিনোকে মূলত নাম্বার ১০ হিসেবেই ব্যবহার করে। ফিরমিনো বল পাওয়ার জন্য অনেক ডিপে নেমে আসে আর তাকে ফলো করার জন্য ডিফেন্ডাররা উঠে এলে তাদের ফেলে আসা স্পেস ব্যবহার করতে পারবে দুই প্রান্তে উইলিয়ান আর নেইমার। ফিরমিনো সবসময় তার অফ দ্যা বল মুভমেন্ট নিয়ে ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রাখে। তাছাড়া, ফিরমিনো নিচে নেমে এসে মাঝে মাঝে ডিফেন্সিভ স্টাবিলিটিও দে। তাই আমার মতে, প্রথম হাফে জেসুসকে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর সাবস্টিউট হিসেবে নামানো যেতে পারে ফিরমিনোকে। এর ফলে যেইটা হবে, ব্রাজিল পুরো ৯০ মিনিটেই পাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার। তবে স্টাইকার যেই খেলুক না কেন, নেইমার আর উইলিয়ানের রোল সব সময় একই থাকবে।
ব্রাজিলের এটাকিং ফরমেশন হয় সাধারণত ৪-৩-৩ তে। তিতে, যেইটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে তা হল,ফ্রন্ট ৩কে যাতে কোন ভাবে ডিফেন্স নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। আর এইটা নিশ্চিত করতে গিয়ে তিতে এখনো পর্যন্ত বিভিন্নভাবে তার মিডকে খেলিয়েছে। সব মিডেই কমন থিম ছিল, মিডে ট্রায়াঙ্গল সৃষ্টি করা। দল সাপেক্ষে কখনো বড় কখনো বা ছোট। (এই ট্যাকটিসটা অসাধারণ একটা ট্যাকটিস কেন সেইটা আমি পরে ব্রাজিলের মিড ব্যাখ্যা করার সময় বলব।)
আক্রমণের সময় দুই ফুলব্যাক উপরে এঠে আসে। এই জায়গায় মাদ্রিদের মার্সেলো আর ব্রাজিলের মার্সেলোর ভুমিকা কিছু পরিবর্তন আছে। এইখানে মার্সেলো ইনসাইড করতে দেখা যায় বেশি। এর ফলে যা হয় মিডের ওয়াইড প্লেয়ার ফ্রী হয়ে যায় আর পাসিং অপশন সৃষ্টি হয়। অন্যপ্রান্তে, দানিলোকেও দেখা যাবে একই কাজ করতে। ভালভাবে বোঝার জন্য নিচে একটি ছবি দেয়া হল যেখানে নীল হল ব্রাজিল।
তীতের অধীনে ব্রাজিলের এখনো পর্যন্ত দুই ধরণের ডিফেন্সিভ ফরমেশন দেখা গিয়েছে। ১ হল ৪-১-৪-১ অন্যটি হল, ৪-৪-২। ব্রাজিলের দলের ডিফেন্সিভ শেইপ সাধারনত ম্যাচে বারবার পরিবর্তন হয়।নিজেদের অর্ধে তারা প্রতিপক্ষকে কখনো ৪-১-৪-১ অথবা ৪-৪-২ তে প্রেস করে। তিতে বিপক্ষ দলকে ওয়াইড এরিয়ায় স্পেস ছেড়ে দিতে পছন্দ করে। এর একটা কারণ বলা যায়, সিলভার এরিয়াল এবিলিটি। ব্রাজিল ডিফেন্সিভ অরগানাইজশনে সব থেকে বড় ভূমিকা এই সিলভা মিরান্ডার জুটি। এরা দুইজনেই অতিরিক্ত পরিমাণ ডিফেন্সিভ মাইন্ডেড। এরা কেউ সামনের স্পেস থাকার পরেও সেইটা ব্যবহার করতে পছন্দ করে না। তারা মুলত যেই কাজটা করে, বল আসলেই দুই ফুলব্যাককে বলটা পাস করে দে। এতে যা হয়, প্রতিপক্ষ খুব সহজে তাদের প্রেস করে বল উইন করে ফেলতে পারে। এর পরেও ব্রাজিল সাধারণত ঝামেলায় পরে না কারণ অলরেডি ডিফেন্সে অনেক প্লেয়ার থাকে কভার দেওয়ার জন্য। সিলভার মুল শক্তি হল, এরিয়াল ডুয়েল, ১ বনাম ১ সিচুয়েশন, গেইম রিডিং এবিলিটি। দূর্বলতা বলতে আমি বলব, কম রিস্ক টেকার। অন্যদিকে মিরান্ডা মুলত ব্যাক লাইন কভার দে। তার খেলার ধরনও সিলভার মত। তবে সিলভার থেকে উচ্চতা বেশি হওয়ার পরেও সে এরিয়াল ব্যাটলে এত ভাল না। বিপক্ষ দলগুলো মিরান্ডার এই দূর্বলতাকে ভালভাবে মার্ক করবে। মিরান্ডা, সিলভার দুইটা অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, তারা দুইজনেই লংপাসে পারদর্শী। এইটা অবশ্য ব্রাজিলের জন্য অন্য রকম একটা সুবিধে দেয়। সিলভা , মিরান্ডা প্রতি ম্যাচে গড়ে ৪.১ এর মত লং পাস দে যা অবিশ্বাস্য।তাছাড়া তাদের লং পাসের সাকসেস রেইট ও ভাল। মুলত ব্রাজিল যে কাজটি করে, বল নিয়ে সামনে আগাতে না পারলে সিলভার মিরান্ডার লংপাস এবিলিটির উপর নির্ভর করে। এই সময় অবস্থা ভেদে দুই ফুলব্যাক অথবা দুই উইংগার ওয়াইড এরিয়ায় অবস্থান করে।
এইবার আসি ব্রাজিলের মিডের ব্যাপারে। ‘০০ সালের পর জোনাল মার্কিং এর খপ্পরে ফুটবল বিশ্বে চাহিদা বেড়ে যায় ডিপ লাইয়িং মিডফিল্ডারদের। পিরলো, ক্রুস, জাভি, বুসকেটস, শোয়েনজি, মদ্রিচরা হয়ে উঠে পজেশনাল ফুটবলের প্রাণ।ব্রাজিল মিস করতে থাকে তাদের গেইম কন্ট্রোল করার ক্ষমতা। ব্রাজিল দলটিতে সব পজিশনে প্লেয়ার থাকলেও অবাক করার মত রি ব্রাজিল এখনো কোন রেজিস্তার জন্ম দিতে পারেনি। ২০০২ তে খেলেছিল এমারসন,তারপর গিলবার্তো, ফিলিপে মেলো, লুইস গুস্তাভোরা সবাই ছিল ডেস্ট্রয়ার।বর্তমানে দলে আগুস্তোর অন্তভুক্তি সেই ডিপ লাইয়িং প্লেমেকারের কোঠাতেই। করিন্থিয়াসে থাকার সময় আগুস্তো আর তিতে এক সাথে এইটা নিয়ে কাজ করে। তাই আশা করা যায়, বিশ্বকাপে সে তিতের বিশ্বাসের মর্যাদা দিবে।
আর এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ব্রাজিল বারবার চেষ্টা করছিল একটা ডেস্ট্রায়ার মিড বানাতে যাতে বিপরীত দলের পজেশনাল মিড খেলতে ব্যর্থ হয়। মিডের কাজ হল যেভাবে হোক প্রতিপক্ষকে মিডে খেলানো যাবে না। তাদেরকে দুই প্রান্তে এ ফোর্স করা। ব্রাজিলের এই মিড যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে সে হল ক্যাসেমিরো। আক্রমনে যদি নেইমার ব্রাজিলের প্রাণ হয়, ডিফেন্স মিডে তা হল ক্যাসিমিরো।ক্যাসিমিরো কাজটি ব্রাজিল দলে একদম সুনির্দিষ্ট।ফরমেশন যাই হোক না কেন, দুই ফুলব্যাকের স্পেস কভার করতে হবে ক্যাসিমিরোকে। দরকার পড়লে কখনো ৫ ম্যান ডিফেন্স ও গড়ে তুলতে হবে তাকে। সহজ কথায়, ক্যাসেমিরোকে নিশ্চিত করতে হবে পিচে কোন ভাবে যাতে স্পেস পড়ে না থাকে।
এখন বাকী ২ যে পজিশন আছে তাতে হল আসল সমস্যা। আপনি কি একজন বক্স টু বক্স মিড আর একজন ক্রিয়েটিভ মিড নিয়ে খেলবেন নাকি একজন হোন্ডিং মিড আর এটাকিং মিড নিয়ে খেলবেন?
এটাকিং মিডটা আপনার লাগবেই কারণ, এটাকিং মিড না থাকলে ব্যাক ৩ নিয়ে খেলা দল গুলোর বিপক্ষে আপনার গোল করার সম্ভবনাও কমে যাবে। তাই আশা করব, তিতে কৌতিকে তার প্রিয় পজিশনেই খেলাবে।
এখন দেখে আসি, কোনটা কখন ব্যবহার করা উত্তম। পৌলিনহো মুলত বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার।এই বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হল ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড কিন্তু তাদের মত ট্যাকটেক্যালি গিফটেড না পউলিনহো তবে পরিশ্রমী আর প্রচুর স্টামিনা সম্পন্ন খেলোয়াড়। তার কাজ হল দলে সেকেন্ড স্টাইকার বা শ্যাডো স্টাইকার হিসেবে খেলা। তার বড় গুণ হল সে সব সময় বিপরীত দলের খেলোয়াড়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেকে ফ্রী স্পেসে খুঁজে পাই।তাছাড়া, তার শারীরিক সক্ষমতা কর্নার কিংবা সেট পিসের সময় ব্রাজিলকে বক্সে অতিরিক্ত সুবিধে দিতে পারে। এইছাড়া ব্রাজিলের যে প্রেসিং সেখানেও কী প্লেয়ার হচ্ছে এই পউলিনহো। বাকী থাকল, দুই ফার্নাদিনহহো, ফ্রেড। ফ্রেডও হচ্ছে বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। তবে পউলিনহো আর ফ্রেডের মধ্যে পার্থক্য হল, ফ্রেডের ড্রিবিলিং স্কিল ওয়ান টু ওয়ানে আর থ্রু বল স্পেশালিস্ট, যেইটা খুব সহজে হাই প্রেসিং দলের বিপক্ষে কাজে লাগানো যায়। তার ম্যাচপ্রতি ৩.৩ টেক অন সত্যি ঈষর্নীয়।ফার্নানদিনহো কে দুইভাবে ব্যবহার করা যায়, এক ডেস্ট্রয়ার আবার ডিপ লাইয়িং প্লেমকার।ম্যাচে তিতে মিডে কোন সমস্যা দেখলেই তাই তার হাতে সুযোগ আছে মিড পরিবর্তন করেই ম্যাচ ঘুরানোর। এজন্য বলা যায়, ব্রাজিলের মিডটা বেস্ট না হলেও ইফেক্টিভ। ব্রাজিলের খেলাটা কিন্তু কখনো মিডে হবে না, ব্রাজিল চাই এটাকিং এরিয়া ডমিনেট করে খেলতে এবং নেইমারের মত প্লেয়ারদের জন্য এই রকম সিচুয়েশন আদর্শ। তাকে ডিফেন্স নিয়ে চিন্তে করতে হবে না।
যাকে নামানোই হোক না কেন, সে অবশ্য ট্রায়াঙ্গুলার শেইপ মেইনটেইন করবে। যদি দেখা যায়, প্রতিপক্ষ হাই প্রেস করা দল তাহলে ছোট হয়ে সেন্ট্রালি চলে আসে সবাই।কারণ হাই প্রেস করা দল গুলো সাধারণত প্রতিপক্ষের প্লেয়ারদের ম্যান মার্ক করে। আর মিড ছোট হয়ে আসলে, তখন মার্ক করা বল মুভমেন্ট করা কষ্টকর হয়ে পড়ে কারণ মিডে ওভারলোড সৃষ্টি হয়।
আর এইটাই হল ব্রাজিলের বিশ্বকাপের এইবারের টোপ। মিড ডমিনেট করা দলগুলোর বিপক্ষে সন্দেহ নেই তিতে এইভাবেই খেলতে চাইবে। এতে যে সুবিধে হয় ব্রাজিলের দুই ফুলব্যাক প্রচুর সময় এবং স্পেস পাই যে কোন ডেডলি কাউন্টারের জন্য। কোন দলই মার্সেলোকে উপরোক্ত ছবিটার মত এতটা স্পেস দিতে চাইবে না। আর এই ব্রাজিল দলের ট্রানজিশনও হয় খুবই দ্রুত। তাই শুধুমাত্র আপনাকে ফুলব্যাকের কথা চিন্তা করলেই হবে না পাশাপাশি আপনাকে চিন্তা করতে হবে মিডে কিভাবে ওভারলোড ঠেকানো যায়।
ব্রাজিল দল মুলত ৪-৩-৩ শেইপে হাই প্রেস করে। এই ব্রাজিল দলে তিতের অধীনে যদি আসলে কিছু উন্নতি হয়ে থাকে আমার মতে তা হল, প্রেসিং আর কাউন্টার প্রেসিং। ব্রাজিল দলটি পিচের হাই আপে একদম ব্যাক থেকে প্রেস করে।প্রেসটা করে মুলত জেসুস। অন্যদিকে বাকীরা ম্যান মার্ক করে আশে পাশে থাকা খেলোয়াড়দের।এই সময় দুই ফুলব্যাকও উপরে উঠে এসে প্রেসিং এ সাহায্য করে। ফলে যেইটা হয় প্রতিপক্ষের ভুল করার প্রবনতা বেড়ে যায়। আর গোলকিপার এলোমেলো শট মারলে মিডে শারীরিক শক্তির জন্য ক্যাসে, পউলিনহোদের বল জিতার সম্ভবনায় বেশি। আর ট্রানজিশন পিরিয়ডে আগেই বলা আছে ব্রাজিল কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠে তিতের অধীনে। তবে সমস্যা হল, গোলকিপার যদি সুইপার কিপার হয়। তাহলে সে কোন মুহুর্তে এই প্রেস ভেঙ্গে সঠিক পাস দিতে পারে। কিংবা কোন ডিপ লাইয়িং প্লে মেকার ব্রাজিলের প্রেস ভেঙ্গে ফেলল। মোটা কথা কোন ভাবে যদি প্রথম প্রেশার ঠিকভাবে ভাঙ্গতে পারে প্রতিপক্ষ তাহলে দ্রুত ট্রানজিশনের মাধ্যমে টার্গেট করবে ফুলব্যাকদের ফেলে আসা স্পেস।ব্রাজিলকে হারানোর অস্ত্র।
ব্রাজিল দলে আরেকটি সমস্যা হল, যেহেতু তাদের দলে তেমন কোন ভাল ডিপ লেয়িং প্লেমেকার নেই তাই ব্যাক থেকে বিল্ড করতে যে পছন্দ করে সেইটা বাধাগ্রস্থ হবে। আর এই ট্রানজিশনের সময় বাধা দেওয়ার জন্য মূলত ব্রাজিলের ৪-১-৪-১ ডিফেন্সিভ শেইপ।
‘০০ সালে ফ্রান্স যখন ইউরো জিতে তখন তারা ব্যবহার করত ৪-২-৩-১ ফরমেশন জিদানকে এটাকিং মিডে রেখে।এই ফরমেশনই ছিল টিকিটাকার আগ পর্যন্ত সব থেকে ডমিনেট ফরমেশন। গার্দিওলার ডায়মন্ড মিড এসে শুরু করে ৪-২-৩-১ এর উপর ছড়ি ঘুরানো। দেখা যায়, ‘০৬ তে ফ্রান্স, ‘১০ নেদারল্যান্ড, ‘১৪ তে ব্রাজিল সবাই এই ফরমেশনে খেলে শেষ পর্যন্ত মিড নির্ভর দলগুলোর কাছে হেরে যায়। ৪-২-৩-১ ফরমেশনটি চিন্তা করে দেখুন, অনেক বেশি প্রেডিক্টবল। একজন ডিপ লাইয়িং প্লে মেকার থাকবে একজন ডেস্ট্রয়ার থাকবে আর একজন ক্রিয়েটিভ মিড। আর তাদের বিপরীতে আপনি ৩ ম্যান সিস্টেম মিড ব্যবহার করলেন।ছবিতে মার্ক করে দেওয়া বক্স দেখুন, কিভাবে জার্মানী শেষ করেছিল ব্রাজিলকে। আর সুইপার কিপার থাকলে কাউন্টার দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
দুই প্রান্তেই প্রতিপক্ষ ১ বনাম ২ সিচুয়েশন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে। মুলত এই ট্রানজিশনে বাধা দেওয়ার জন্য তিতের ৪-১-৪-১ সিস্টেম।নিচের ছবিটি খেয়াল করুন
তিতের ৪-১-৪-১ সিস্টেম খুবই সুন্দর ভাবে আউটনাম্বার করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিপক্ষের পজেশনাল বেসড ফুটবলকে। এই সিস্টেমে আপনি বল পজেশন হোল্ড করে কম করলেও ট্রানজিশনের সময় গোল খাওয়ার সম্ভবনা কমে আসে।দুই বক্সে দেখুন ব্রাজিল ৪ বনাম ৩ সিচুয়েশন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে। তাই এই জায়গায় প্রতিপক্ষের একটা ভুল পাস মানে কাউন্টার। ব্রাজিলের এই সিস্টেমটাই প্রতিপক্ষের অর্ধে গেলে হয়ে যায় ৪-৩-৩। এই ফরমেশনটা আপনার আক্রমণ আর ডিফেন্সকে খুব সুন্দর ভাবে ব্যলান্স দে। আপনার এটাকিং মিড যদি ওয়াইড এরিয়া, সেন্ট্রাল এরিয়া দুই এরিয়াতে কভার দিতে পারে তাহলে জাস্ট ভেবে দেখুন এই রকম ট্রানজিশন সময়ে কৌতি,নেইমি জুটি কেমন ভয়ানক হবে।কারন তারা দুইজনেই ওয়াইড এরিয়া এবং সেন্ট্রাল দুইটাতেই নিজেরা কম্বিনেশন করে খেলতে পছন্দ করে।
কর্নার ট্যাকটিসের সময় তিতে ৪-৪-২ জোনাল ব্যবহার করে। ফলে ম্যান মার্কিং এর ঝামেলায় আলাদা করে যেতে হয় না। সবাই একদম ডিপে বসে থাকে আর সুযোগ পেলে কাউন্টার।
তাছাড়া এই ব্রাজিল দলে নেইমার বাদেও ভিন্ন ভিন্ন স্কোরার আছে। লং রেং এবিলিটির জন্য আছে ক্যাসে, ফার্না, কৌতি আবার ফ্রিকিক স্পেশালিস্ট হিসেবে আছে উইলিয়ান,নেইমার, কৌতি।
এই ব্রাজিল দল সব দিক দিয়ে ব্যালান্স। ইভেন যদি ব্যাক থেকে খেলা বিল্ড করার জন্য সুইপার কিপারও দরকার পরে তিতের দলে সেইটা আছে। এই দলের সব থেকে বড় গুণ হল, প্রতিটা খেলোয়াড়ের আলাদা স্টাইল আরেকটি হল এরা খুবই অর্গানাইজড যেইটা সাধারণত জার্মানী, ইটালীর মত ইউরোপের দলের কাছে দেখা যায়। এরা এতটাই অরগানাইজড যে ম্যাচে তাদের শেইপ প্রতিপক্ষ কোন ভাবে ব্রেক করতে পারে না। আর তাই কোচের সুযোগ আছে, যে কোন মুহুর্তে সাবস্টিউট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার। কারণ ফরওয়ার্ড লাইনকে উন্মুক্ত করতে আপনার বেস্ট নয় ইফেক্টিভ মিডই দরকার যেইটা কিছুদিন আগেই মাদ্রিদে জিদান করে দেখিয়েছে। খুব সম্ভবত সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এইবার আমরা হয়ত দেখব ইফেক্টিভ ওয়েতে কিভাবে “জোগো বনিতো” খেলতে হয়।